আজকের আর্টিকেলে আমরা জানার চেষ্টা করব যে এসি অর্থাৎ এয়ারকন্ডিশন কিভাবে কাজ করে। এবং যেহেতু গরমের সিজন আসছে। তাই এটাও আলোচনা করব যে এয়ারকন্ডিশন কেনার সময় কোন কোন জিনিসগুলো কে মাথায় রাখা দরকার।
আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার পর এসি কিনতে যাওয়ার সময় আপনাদের কোন সমস্যা হবে না। তো চলুন আজকে দেখে নেওয়া যাক স্প্লিট এসি কিভাবে কাজ করে।
এসি কেনার আগে এসির বর্তমান দাম জেনে নিতে পারবেন বিডিস্টল.কম থেকে।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
একদম ডিটেইলস এ না গিয়ে আমি বেসিক ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করছি। একটা এসির মধ্যে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থাকা দুটো কয়েল (Two Connected Coil) থাকে।
যার মধ্য দিয়ে ক্রমাগত রেফ্রিজারেন্ট ফ্লুইড (Continuous Flow Of Refrigerant Fluid) প্রবাহিত হতে থাকে। ঘরের মধ্যে যে কয়েল টা লাগানো থাকে সেটাকে এভাপ্ররেটর Evaporator বলা হয় এবং ঘরের বাইরের দিকে যে কয়েলটা লাগানো থাকে সেটাকে কন্ডেনসার Condenser বলা হয়।
আর এর বেসিক ওয়ার্কিং প্রিন্সিপাল টা একেবারে সিম্পল। একটা এয়ারকন্ডিশনারের কাজ হল ঘরের মধ্যে থাকা এভাপ্ররেটর কে ঠান্ডা রাখা। মানে রুম টেম্পারেচার থেকে বেশি ঠান্ডা রাখা এবং কন্ডেনসার কে গরম রাখা। অর্থাৎ বাইরের পরিবেশে এর টেম্পারেচার থেকে বেশি গরম রাখা।
আর এর সাহায্য আপনার ঘরের মধ্যে থাকা এভাপ্ররেটর আপনার রুমের হিট কে Absorbing Room Heat করবে এবং বাইরে থাকা কন্ডেনসার পরিবেশের মধ্যে ওই হিট টাকে রিলিজ করে দেবে। আর এই কাজগুলো আরও ইফেক্টটিভলি করার জন্য এর মধ্যে ফ্যান লাগানো থাকে। আর এই কাজটিকে করার জন্য আপনার এয়ারকন্ডিশন এর মধ্যে আরও দুইটি কম্পোনেন্ট এর দরকার হয়।
একটা কম্প্রেসার Compressor আরেকটা হল এক্সপেনশন ভাল্ব Expansion Valve। এই কম্প্রেসার এর মধ্যে রেফ্রিজারেন্ট এর প্রেসার কে বাড়িয়ে তার তাপটাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তাই কম্প্রেসার এর আউটপুট যে রেফ্রিজারেন্ট বের হয় সেটা পরিবেশের টেম্পারেচার থেকে বেশি গরম হয়। এরপর যখন ওই গরম রেফ্রিজারেন্ট কন্ডেনসার এর কয়েল এর মধ্যে দিয়ে পাস করে তখন তার টা পরিবেশ এর মধ্যে বেড়িয়ে যায়।
আর এই কাজটাকে ইজি করার জন্য এই কনডেনসার এর মধ্যে ফ্যান লাগানো থাকে। আর যখন রেফ্রিজারেন্ট এর মধ্যে দিয়ে হিট টা বেরিয়ে যায় তখন সেটা গ্যাস থেকে লিকুইড এ পরিণত হয়। এরপর কনডেনসারের এক্সিটে একটা এক্সপেনশন ভাল্ব লাগানো থাকে।
আপনি হয়তো জানেন যে কোন লিকুইড এর প্রেসার কে যদি জোর করে কমানো যায় তবে সেটা গ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর ঠিক এই কাজটাই এক্সপেনশন ভাল্বের মধ্যে হয়। যার সাহায্যে কন্ডেনসার এর মধ্যে থেকে আসা লিকুইড রেফ্রিজারেন্ট কে পুনরায় গ্যাসে পরিণত করে।
আপনার ঘরের মধ্যে থাকা ইভাপোরেটরের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এই পরিস্থিতিতে ওই রেফ্রিজারেটর এর তাপমাত্রা আপনার রুম টেম্পারেচার থেকে অনেক কম হয়। যার সাহায্যে আপনার ঘরকে ঠান্ডা করা হয়। তো মোটামুটি আপনার বাড়ির এসি এরকম ভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ Realme Narzo 30A | Realme Narzo 30A Full Specifications
এবার জেনে নেয়া যাক যে এসি কিনতে যাওয়ার সময় কি কি জিনিস মাথায় রাখা দরকার। একটা এসি কিনতে যাওয়ার সময় নানান প্রশ্ন মাথার মধ্যে আসতে পারে। যেমন কোন এসি কিনবেন? স্প্লিট এসি নাকি উইন্ডো এসি।
তারপর কত টন এর এসি কিনবেন ১ টন নাকি দেড়টন নাকি ২ টন। তারপর এই সকল সমস্যা মিটে গেলে আরো একটা সমস্যা আছে সেটা হল ইনভার্টার এসি কিনবেন নাকি নরমাল এসি কিনবেন। এই সব কিছুর ডিটেইলস এ আজকে আমি আপনাদের বলবো।
তবে আমি একেবারে এক্সপার্ট নই আমি যতটুকু জানি ততটুকু বোঝানোর চেষ্টা করছি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
প্রথমে দেখা যাক উইন্ডো এসি কি আর স্প্লিট এসি কি। উইন্ডো এসির নাম দেখে আপনি বুঝতে পারছেন যে এটা কি রকম হতে পারে। এটা একটা বড় সাইজের ইউনিট হয়। যেটা আপনার কোন জানালাতে ফিট হয়ে যায়। তো এক্ষেত্রে আপনার জানালা টা ব্লক হয়ে যাবে আর ওই জায়গাতেই এসি টা ফিট হয়ে যাবে।
আর এর অর্ধেকটা আপনার ঘরের মধ্যে থাকবে এবং অর্ধেকটা বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকবে। তবে সমস্যা হলো এরকম রুম আছে যেখানে কোনো জানালা থাকে না কিংবা হতে পারে যে আপনি আপনার জানালার টাকে ব্লক করতে চান না। তখন সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিনতে হবে একটা স্প্লিট এসি।
এক্ষেত্রে একটা ইনডোর ইউনিট হয় আরেকটা আউটডোর ইউনিট হয়। ইনডোর ইউনিটে লাগানো থেকে ইভাপ্ররেটর এবং আউটডোরে লাগানো থাকে কন্ডেনসার। একটূ আগেই যেমন আমি বুঝিয়ে ছিলাম ওইটা একচুয়ালি স্প্লিট এসি কিভাবে কাজ করে সেটাই বোঝাচ্ছিলাম।
তো এক্ষেত্রে এনডোর ইউনিট টা আপনার ঘরের মধ্যেই থাকবে এবং আউটডোর ইউনিট টাকে আপনি আপনার বাড়ির বাইরের দেয়ালের সঙ্গে কিংবা ছাদের মধ্যে ফিট করে দিতে পারেন। তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে যেন আউটডোর ইউনিট এর পাশে যেন অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে।
একটু স্পেস এর দরকার হয় তা না হলে হিট টা তারাতারি রেডিয়েট হতে পারে না। এক্ষেত্রে ইনডোর ইউনিট এবং আউটডোর ইউনিট এর মধ্যে যে পাইপলাইন টা থাকে সেটাকে আপনার দেয়ালের মধ্যে একটা ছোট ফুটো করে নিয়ে যাওয়া হয়। তো এই কারনে আজকাল বেশিরভাগ মানুষ স্প্লিট এসি কেই কিনতে বেশি পছন্দ করে। তো আশা করি বুঝতে পারবেল যে উইন্ডো এসি কি এবং স্প্লিট এসি কি।
আরও পড়ুনঃ রমজান মাসের আমল | মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল ও রমজানের ফজিলত
আর এটা যখন আপনি ডিসাইড করে নেবেন যে আপনি কোনটা কিনবেন তারপর আপনার সামনে প্রশ্ন আসবে যে কত টনের এসি কিনবেন। প্রথমে জেনে নেয়া জাক এই টন কি জিনিস। যদি বলে ১ টন এর এসি তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার ঘরের মধ্যে ১ টন বরফ রেখে দিলে সেটা আপনার রুম কে যত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করতে পারবে ওই এসি টার ক্ষমতা ততটা।
তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে যত বেশি টন এর এসি আপনি নিবেন। আপনার রুম তত তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হবে। কিন্তু যদি ছোট রুমের মধ্যে আপনি বেশি টনের এসি লাগান তবে সেই তত তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হবে বটেই। কিন্তু আপনার ইলেকট্রিক খরচ অনেক বেশি হয়ে যাবে। এজন্য যখনি আপনি এসির টন কে সিলেক্ট করবেন তখন আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার রুমের সাইজ কত বড়।
কারন ছোট রুম এর মধ্যে যদি আপনি বেশি টন এর এসি ব্যবহার করেন। তাহলে আপনার এনার্জিও লস হবে এবং তার সাথে ইলেকট্রিক বিল অনেক বেশি আসবে। তাছাড়াও বেশি টন এর এসির দাম ও বেশি হয়।
রুম যদি আপনার 100 স্কয়ার ফিটের থেকে ছোট হয় তবে ১ টন বা ১ টন এর থেকে কম পরিমান এর এসি ব্যবহার করুন এতেই আপনার কাজ চলে যাবে। যদি 100 থেকে ১৫0 স্কয়ার ফুটের মধ্যে হয় তবেই আপনি ১ টন এসি আপনি কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন ভালোভাবে। যদি ১৫০ থেকে ২০০ স্কয়ার ফিট এর মধ্যে আপনার রুম হয় তবে আপনাকে ১.৫ টন এর এসি আপনাকে লাগাতে হবে।
এ কারণে যখন আপনি এসি কিনতে যাবেন তখন ওখানে গিয়ে আপনি বলে দেবেন যে আপনার রুমের সাইজ টা কত। কত স্কয়ার ফুট আছে সেটা যদি আপনি না হিসাব করতে পারেন। তবে আপনার রুম লম্বা কত ফুট চওড়া কত ফুট সেটা বলে দিলেই হয়ে যাবে ওরা ক্যালকুলেশন করে নেবে।
আরও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সেরা ৫টি ওয়েবসাইট
এবার আরেকটা প্রশ্ন হল যে আপনি কত স্টারের এসি আপনি কিনবেন। ১ স্টার এর এসি পাওয়া যায়, ২ স্টার এর এসি পাওয়া যায়, ৩ স্টারের পাওয়া যায়, ৫ স্টারের এসি পাওয়া যায়।
আপনার ক্ষেত্রে কোনটা কেনা উচিত। এই স্টার গুলো কিন্ত কুলিং এর ক্ষেত্রে কোন ইফেক্ট ফেলে না। মানে এই রকম নয় যে ১ স্টার এর এসি কম ঠান্ডা করবে এবং ৫ স্টার এর এসি বেশি ঠান্ডা করবে।
এই স্টার গুলো দিয়ে থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ইলেকট্রিক কত টাকা খরচা হবে। মানে স্টার যত বেশি হবে তত ইলেকট্রিসিটি কম খরচা করবে। আর স্টার যত কম হবে তত বেশি ইলেকট্রিসিটি খরচা হবে।
সবাই জানে যে এসি কেনাটা বড় ব্যাপার না কিন্তু এই এসিকে চালানো টা তাকে মেন্টেন করাটা একটা সময় অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যায়। ধরুন একটা ১ স্টার এর এসি আপনি প্রত্যেকদিন ১২ ঘণ্টা করে 5 মাস চালালেন। তাহলে যদি আপনার ইলেকট্রিকের বিল 10000 টাকা আসে।
তবে সেটা ৩ স্টার হলে হয়তো নয় হাজার টাকা আসবে এবং 5 স্টার হলে হয়তা ৮০০০ হাজার টাকারও কম আসতে পারে। তবে এটা আমি শুধুমাত্র তুলনা করার জন্য বললাম। একুরেট এটাই আসবে এরকম কিন্তু নয়।
মানে বোঝাতে চাইছি যে ইলেকট্রিকের বিল কম আসবে। যদি আপনি বেশি স্টার এর এসি কিনেন। তবে আরো একটা ব্যাপার আছে যদি আপনি কন্টিনিয়াসলি এসি কে না চালান। তবে কিন্তু আপনার বেশি স্টার এর এসি নিয়ে খুব একটা বেশি লাভ হবে না। কারণ বেশি স্টার এর এসির দাম ও অনেক বেশি হয়।
এ কারণে আপনাকে যে অতিরিক্ত টাকাটা খরচা করতে হবে বেশি স্টারের এসি কেনার জন্য। সেই টাকাটা আপনি ইলেকট্রিসিটি বাঁচিয়ে খুব তাড়াতাড়ি তুলে নিতে পারবেন না। এই কারণে যারা খুব বেশি সময় এসি চালায় তাদের ক্ষেত্রে বেশি স্টার এর এসি নেওয়াটা লাভজনক। তবে যারা কম চালায় তাদের ক্ষেত্রে খুব একটা ইফেক্ট ফেলে না।
এবার দেখা যাক ইনভার্টার এসি এবং নন ইনভার্টার এসির মধ্যে পার্থক্যটা কি। দেখুন, একটা আপনি যখন নন ইনভার্টার এসির মধ্যে যদি আপনি 25 ডিগ্রি সেট করে দেন।
তবে কম্প্রেসার চালু হবে এবং আপনার ঘরকে মোটামুটি ২৩ ডিগ্রী এবং 24 ডিগ্রি টেম্পারেচারে আনার পর কম্প্রেসার বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর আপনার রুমের টেম্পারেচার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে এবং ২৫ ডিগ্রি কে ক্রস করে যাবে।
যখন আপনার রুম টেম্পারেচার ২৫ ডিগ্রি কে ক্রস করে যাবে। তখন কম্প্রেশার আবার চালু হয়ে যাবে। তো নন ইনভার্টার এসিতে এই কম্প্রেশার বার বার চালু হয় এবং বার বার বন্ধ হয়। এই কারনে বিদ্যুৎ বিল বেশি খরচা হয়।
কিন্তু ইনভার্টার এসিতে এরকম হয়না। অনেকেই ভাবতে পারে যে ইনভার্টার এসি মানে ইনভার্টার এ চলে ভাই ওই রকম কিছু নয়। ইনভার্টার এসিতে এমন একটা কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয় যেটা বন্ধ হয় না।
এক্ষেত্রে যদি আপনি রুম টেম্পারেচার কে ২৫ ডিগ্রিতে সেট করে রাখেন এবং আপনার রুম টেম্পারেচার যদি 25 ডিগ্রি তে চলে আসে তারপরেও কম্প্রেসার বন্ধ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে চলতে থাকে এবং 25 ডিগ্রিকে মেন্টেন করতে থাকে। এই কারণে ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ বিল কম খরচা হয়।
তাহলে আমরা বুঝতে পারছি ৫ স্টার ইনভার্টার এসি সবথেকে কম ইলেকট্রিসিটি ইউজ করে। আর ১ স্টার নন ইনভার্টার এসি সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ ইউজ করে। এবার এতো সবকিছু জানার পর আপনার মনে হতে পারে যে কোন কোম্পানির এসি টা কেনা উচিত হবে।
আরও পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে যেই কাজ গুলো অবশ্যই করবেন নাহলে বিপদ
তাহলে আমি বলব যে আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার এলাকাতে কোন কোম্পানির এসির সার্ভিস সেন্টার আছে। কারণ হয়তো আপনি অনলাইনে অনেক কম দামে কিনে নিতে পারবেন।
কিন্তু যদি কোন প্রবলেম হয়। তখন আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। এ কারণে প্রথমে দেখে নিন সার্ভিস সেন্টার আপনার বাড়ির কাছে কার কাছে। আর তারপরে আপনি ডিসাইড করুন যে কোন কোম্পানির এটা আপনাকে কেনা উচিত হবে।
তো আশা করি বোঝাতে পেরেছি, যে এসি কেনার সময় আপনাকে কোন কোন জিনিস গুলো মাথায় রাখতে হবে। এছাড়াও যদি কিছু মিস করে থাকি তবে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট এ জানাবেন।
আর যদি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন আর এমন কেউ যদি আপনার চেনা পরিচিত থাকে যে তিনি এসি কেনার প্লান করছে তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি তার সঙ্গে শেয়ার করবেন।