ডিপফেক ভিডিও থেকে সাবধান

হাসিবুর
By -

সম্প্রতি বারাক ওবামা একটি ভিডিওতে ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতে দেখা যায়। কিন্তু মূলত সেটি ছিল একটি ডিপফেক ভিডিও। প্রযুক্তির সহায়তায় আজকাল এমন সকল ভুয়া ভিডিও তৈরি সম্ভব হচ্ছে, যেগুলো আসল না নকল বোঝা সত্যিই কঠিন। ডিপফেক ভিডিও ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি কর্মসূচি চালু করেছে। কারণ তাদের কাছে এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এমনভাবে ‘ডিপফেক' ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং বানানো সম্ভব হচ্ছে যে সেগুলি আসল কিংবা নকল তা বোঝা সত্যিই বেশ কঠিন।

ডিপফেক ভিডিও তৈরি করার জন্য একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম অনেকগুলো ছবি ব্যবহার করে মুখের অভিব্যক্তি এবং পেশীর নাড়াচড়া বিশ্লেষণ করে থাকে। তারপর তা থেকে নতুন ছবি যেমন- মুখ নড়াচড়া তৈরি করে। ডিপফেক ভিডিওর চরিত্র হতে কারো জীবিত থাকারও দরকার হয় না। যেমন- চিত্রশিল্পী সালভাদর ডালি মারা গেছেন ১৯৮৯ সালে। তবে ফ্লোরিডার ডালি মিউজিয়াম সুরিয়ালিজমের এই কারিগরকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনছে।

এটা নকল করার মজার দিক

তবে অনলাইনে থাকা ৯৬ শতাংশ ডিপফেক ভিডিও পর্নোগ্রাফির অংশ এর প্রায় সবগুলোতেই নারীদের দেখা যায়। এর মধ্যে স্কারলেট ইওহানসেনের মতো তারকা যেমন আছেন, তেমনি আছেন সাধারণ নাগরিকও। অস্ট্রেলিয়ার নোয়েল মার্টিন হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে আপলোড করা তার কিছু ছবি ফটোশপ করে পর্ন ভিডিও এর মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিকে বলা হয় ফেস-সোয়াপ প্রযুক্তি। তিনি আরো বলেন, এই প্রযুক্তি জীবন ধ্বংস করার মতো একটা কঠিন ব্যাপার। চাকরি, মানসিক স্বাস্থ্য, আপনার ভাল থাকা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সুনাম, সম্মান সবকিছুর উপর এর বিশাল প্রভাব পড়ে।

আরও পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া মোবাইলফোন খুঁজে পাওয়ার উপায়

'ডিপফেক ডিটেকশন চ্যালেঞ্জ' নামে ২০১৯ সালে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফ্রম ফেসবুক। এটির প্রাইজমানি ছিলো কয়েক লাখ ইউএস ডলার। এটি উদ্দেশ্য ছিল ভুয়া ভিডিও ধরার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার অনুপ্রেরণা দেয়া। গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন কংগ্রেসে জোর করে ঢুকে পড়ার এই ছবিটি একেবারে বাস্তব। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার ভুয়া ছবির প্রভাব একবার কল্পনা করুন! ডিপফেক ভিডিও ধরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি কর্মসূচি রয়েছে। তারা এটিকে বলছে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু'।

গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইন্সটিটিউটের গবেষক সারাহ ব্রেসান বলছেন, বর্তমানে আমরা দেখছি কোনো রাজনৈতিক দল তার বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। এই অবস্থায় যদি প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া অডিওভিজ্যুয়াল আবেগের কথা বলা যায়,  তথ্য যোগ করা যায় তাহলে কি আমরা সত্যি সত্যি বুঝতে সক্ষম হব যে এটি রাজনৈতিক বিরোধীরা সহিংসতার ডাক দিচ্ছে অথবা কিছু বলছে? মানুষ সারাক্ষণ শান্ত এবং বিবেচনাবোধ নিয়ে গণমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে না। তাই সত্যি মিথ্যা বুঝতে পারেনা তাই এটির প্রভাব সর্বনাশা হতে পারে।

ব্রেসান বলছেন এমন একটি সময় হয়তো আসতে পারে যখন মানুষ ধরেই নিবে যে মিডিয়াতে যা দেখানো হয় তার সবগুলোই ভুয়া, কেননা কোনটা সত্যি সেটি নির্ধারণ করা বর্তমানে কঠিন ব্যাপার হয়ে উঠছে। এই অবস্থা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য ক্ষতির হতে পারে। প্রযুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রি ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা এর উপর নির্ভরশীল।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn more
Ok, Go it!