ফুটবল খেলার ইতিহাস — ফুটবল খেলা দেখেননি অথবা অন্তত একবার হলেও ফুটবল খেলেননি এমন লোক বর্তমান সময়ে খুঁজে পাওয়াটা অনেক দুষ্কর ব্যাপার। একটি খেলা যে সারাবিশ্বের মানুষকে এভাবে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারে, তা এই ফুটবল খেলা না দেখলে হয়তোবা অনুভব করা যাবেনা। কিন্তু সকলেই শুধুমাত্র ফুটবল খেলা দেখে থাকে না। কেউ কেউ আছেন যারা ফুটবলের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হয়ে পাশাপাশি ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চায়। ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে সে জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতেই মূলত আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
মানবসভ্যতার নানা বাকে ফুটবল
ফুটবল নামটির সঙ্গে রয়েছে বেশ সার্থকতা। ফুট শব্দের অর্থ হচ্ছে পা। আর বল শব্দের প্রচলিত বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘বল’। যাকে পূর্বে বলতো গোলক। মূলত পা দিয়ে বলকে লাথি মেরে খেলাকেই বলা হয় ফুটবল। আর এমন একটি খেলা অর্থাৎ ফুটবল খেলা পাওয়া গেছে মানব সভ্যতার নানান বাঁকে।
মেসোমেরিকান সভ্যতা
বলের সাহায্য খেলার প্রথম প্রমান দেখা যায় মেসোমেরিকান সভ্যতাতে। যা প্রায় গত ৩০০০ হাজার বছর পূর্বে হতো সেই খেলা। আর সেই বলটি ছিলো মূলত পাথরের। অ্যাজটেকদের সেই খেলাতে কিছু অনুষ্ঠানে বলকে মনে করতো সূর্যের প্রতীক। আর সূর্য দেবতার সম্মানেই তারা খেলায় বিজয়ী দলের দলপতিকে উৎসর্গ করতো অ্যাজটেকরা। তবে হা মেসোমেরিকান সভ্যতাই ছিলো রাবার ইউজারকারী প্রথম সভ্যতা। তাই তাদের খেলাতে এমনকি রাবারের বলের ব্যবহারের ও নজির আছে।
আরও পড়ুনঃ অলিম্পিক গেমের ইতিহাস | অলিম্পিক গেমসের সম্পূর্ণ ইতিহাস
এশীয় ও অস্ট্রেলীয় সভ্যতা
বলকে লাথি মেরে খেলতে হয় এমন ধরনের খেলার বিষয়ে প্রথমে জানা যায় চীনাদের হিস্ট্রি থেকে। হান রাজবংশের সময়ে ২য় এবং ৩য় খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীন দেশে একটি ধরনের খেলা প্রচলিত ছিলো। যার নাম ছিলো হচ্ছে ‘কুজু’। যাকে সরাসরি ইংরজিতে করলে হয় কিকবল 'Kickball'। কুজু খেলাটি খেলতো একটি গোল বল ব্যবহার করে। পশম অথবা পালককে চামড়া ব্যবহার করে মুড়ে তৈরি করা হতো বল। তারপর চারকোণা একটি মাঠের মাঝে হতো সেই খেলা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা বিস্তার লাভ করছে মালয় উপদ্বীপে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা জাপান ও প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপ গুলোতে এবং অস্ট্রেলীয়াতে ও ছড়িয়ে পড়ছে কুজুর মতো এই খেলাটি। জাপানিজরা এই খেলাকে বলতো খেমারি। অন্যদিকে অস্ট্রেলীয়ায় এই খেলার নাম ছিলো মার্ন গুক। ১৮০০ শতকে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা গাছের পাতা এবং মূলকে ব্যবহার করে বল বানিয়ে এই খেলা খেলতো।
তাছাড়াও বলকে লাথি মেরে খেলার প্রচলিত ছিলো প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সভ্যতাতে। তবে হ্যাঁ সেসব অঞ্চলে খুব বেশি বড় আকারে খেলা হতোনা। যদিওবা গ্রেট ব্রিটেনে এই খেলাটিকে পৌছে দেয় রোমানরাই। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরাই এই খেলার প্রচলন ঘটায় সারাবিশ্বে। আর যার কারণে বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ কাছে পছন্দের দলের খেলা অনুষ্ঠিত হলেই ভাই-বোন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে লাইভ ফুটবল ম্যাচ খেলা দেখতে সবাই মেতে উঠে।
ব্রিটেনঃ আধুনিক ফুটবলের জন্মভূমি
পূর্বকথা
ব্রিটেনকে বলা হয়ে থাকে মূলত আধুনিক ফুটবলের মাতৃভূমি বা জন্মভুমি। সেই ১২০০ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড এর মাঠে-ঘাটে খেলতো ফুটবলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নানান ধরনের খেলা। তবে সেসকল খেলাতে নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিলো না বললেই হয়। এমনকি সেই সকল খেলাতে পায়ের পাশাপাশি হাতের ব্যবহার করা হতো অহরহ। অনেক সময় এসকল খেলাতে আবার অনেক বেশি মানুষেরা অংশগ্রহণ করতো। যার কারণে সেখানে হাতাহাতি, মারামারি এমনকি অনেকে মৃত্যুবরণ করছে।
খেলাকে কেন্দ্রবিন্দু করে বাড়িঘর ভাংচুর করা হতো প্রায় সময়। আর এসকল অনিয়মে রাজা বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় অ্যাডওয়ার্ড সকল শহর থেকে এই খেলাকে নিষিদ্ধ করে দেন। পরবর্তী ১৩৪৯ সালের দিকে আবার তার পুত্র তৃতীয় অ্যাডওয়ার্ড পুরো ব্রিটেন থেকেই এই খেলাকে নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু হ্যাঁ রাজা সপ্তম হেনরির আবার ফুটবলের প্রতি অনুরাগ ছিলো বেশ। তার রাজকীয় জুতার ভান্ডারে ফুটবল খেলার জন্যে ১ জোড়া চামড়ার জুতো এবং ৪৫ জোড়া ভেলভেট দেখলেই সেটা বোঝা যায়।
তবে হ্যাঁ তার স্থুলতার কারনে এ খেলাতে তিনি তেমন বেশি পারদর্শী ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে ১৫৪৮ সালে এই খেলাটি দাঙ্গার সৃষ্টি করে এই কারণ দেখে রাজা সপ্তম হেনরি আবার পুনরায় তৎকালীন ফুটবলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তৎকালীন সময়ে ফুটবলের এই হিংস্রতার ইতিহাস বারবার ফুঁটে উঠেছে ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দী জুড়ে। এই খেলাটি নিষিদ্ধ হলেও ফুটবলের মতোই আরো নানান ধরনের খেলার প্রচলন ছিলা ইংল্যান্ডের মাঠে ঘাটে। এমনকি লন্ডন শহরে চলতো সেসকল খেলা। সে সময় শুধুমাত্র ইংল্যান্ড না, ফুটবলের মতো খেলাটি বিস্তার লাভ করছিলো স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলসতে।
তবে হ্যাঁ সেসকল খেলার হিংস্রতার জন্যে সেগুলো ১৮৩৫ সালে আবার পুনরায় নিষিদ্ধ করা যেতে পারতো। কিন্তু ততোদিনে সাধারণ মানুষের খেলার স্তর থেকে ফুটবল এর উন্নতি হয়েছিকো। সে সময়ে ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুল গুলোর মাঝে ফুটবলের মতো আরো নানান ধরনের খেলার ব্যবস্থা ছিলো। এমন ২টি প্রধান পাবলিক স্কুল ছিলো রাগবি এবং ইটন। রাগবি স্কুলে ফুটবল খেলাতে পায়ের পাশাপাশি ঠিক হাতেরও ব্যবহার প্রচলিত ছিলো। সেখান থেকেই মূলত জন্ম হয়েছে আজকের এই রাগবি খেলার। অন্যদিকে ইটন স্কুলে শুধুমাত্র পায়ের মাধ্যমেই ফুটবল খেলতো। অর্থাৎ এটাকে বলা চলে বর্তমান সময়ের ফুটবলের আদিপিতা।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় ৫টি সফটওয়্যার
নিয়মাবলীর জন্ম
তখন ছিলো ১৮৪৮ সাল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়ার নিচে ইংল্যান্ডের বড় বড় পাবলিক স্কুল গুলোর প্রতিনিধিরা জমা হতো। সে সময়ে কিছু কিছু নিয়মকানুন করা হয়। সেগুলোকে বলা হতো কেমব্রিজ রুলস। তৎকালীন সসময়ে বড় বড় স্কুলগুলি অর্থাৎ রাগবি, ইটন, শ্রুসবেরি ও হ্যারো, উইনচেস্টার এই সকল নিয়ম-কানুন মেনে নেয়। যদিওবা ১৮৫০ এর দশকে ইংল্যান্ডের অনেক স্কুলগুলো তাদের নিজেদের মতো করে নিয়ম-কানুন তৈরি করে এই খেলা চালিয়ে নিয়েছিলো। আবার কিছু কিছু স্কুল শেফার্ড রুলস নামের ভিন্ন কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতো।
বেনিজার কব মর্লেই হচ্ছে ২২ বছরের এক উজ্জ্বল তরুণ। তিনি ছিলেন তৎকালীন বার্নস ক্লাবের দলনেতা। ২৬ অক্টোবর ১৮৬৩ সালে, লন্ডনের গ্রেট কুইন স্ট্রিটের ফ্রিম্যাসন ট্যাভার্নে এবেনিজার ডাক দেন একটি মিটিং। আর সেই মিটিংয়ের ফলস্বরুপই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে দ্যা ফুটবল এসোসিয়েশন। বর্তমান সময়ে যেটা পরিচিত FA নাম দিয়ে।
পরবর্তী সময়ে আরও ৫ মিটিং করার পরে অবশেষে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের বিশেষ কয়েকটি নিয়মকানুন বানাতে সমর্থ হয়। কিন্তু হ্যাঁ শেষ মিটিংয়ের দিনে ব্ল্যাকহিথ ক্লাবটি অ্যাসোসিয়েশন থেকে ত্যাগ করে। কেননা তাদের দাবি ছিলো মূলত ফুটবল খেলাতে হাতের ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিপক্ষকে ধরে রাখার জন্য প্রথা বজায় রাখতে হবে। ব্ল্যাকহিথ ক্লাবকে সাপোর্ট করে আরো কয়েকটি ক্লাব মিলে তারপর গঠন করে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন। যা বর্তমানে রাগবি খেলা নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন
বর্তমান সময়ে ফুটবল খেলার সকল নিয়ম-কানুন পরিচালিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের দাঁরা। আর হ্যাঁ এই আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এর জন্ম হয়েছিলো ১৮৮৬ সালে যা ম্যানচেস্টার শহরে। দি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দি স্কটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, দি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েলস ও আইরিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মিলে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আর সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে। যা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ৩০ নভেম্বর ১৮৭২ সালে।
দেশে দেশে ফুটবল
আধুনিক ফুটবল এর জনক হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষদেরকে ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী করা এবং উৎসাহিত করা এই দুটোর দায়ভার মূলত ব্রিটিশদের। দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোতে ব্রিটিশদের ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারনে ফুটবল খেলাটাও অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং ভারতবর্ষের মত দেশগুলো যেগুলোতে ব্রিটিশরা জোরপূর্বক কলোনি বানিয়ে ছিলো সেগুলোতে ফুটবল খেলার তেমন বেশি আগ্রহ তৈরী হয়নি।
ঐসকল দেশে ক্রিকেট, রাগবির মতো ইত্যাদি খেলা প্রচলিত ছিলো। তাছাড়াও ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য অনেক দেশেই ফুটবল খেলোয়াড়দের মাঝে শ্রেণীর পার্থক্য ছিলো চোখে পড়ার মতোই। যেমন ধরুন ইংল্যান্ডের ফুটবল দলের সকল শ্রেণীর খেলোয়াড় কিছু কিছু করে থাকলেও বেশিরভাগ খেলোয়াড়রা ছিলো নিচু শ্রেণী থেকে উঠে আসছিল।
আবার ডাচদের ক্ষেত্রে ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে উঁচু শ্রেণীর লোকেরাই খেলাতে বেশি অংশগ্রহণ করতে পারতো। ফুটবল খেলায় সেসময়ে জাতীয় দলের খেলার তুলনায় ক্লাবের খেলাগুলো বেশী পরিমাণে গুরুত্ব পেতো। প্রথম দিকে শুধুমাত্র ব্রিটিশ ক্লাব গঠন শুরু করলেও পরবর্তীতে একে একে বিভিন্ন দেশে ফুটবল ক্লাব গঠন করা হয়। যা খুবি দ্রুততার সাথে ফুটবলকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলে।
আরও পড়ুনঃ ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম | ফ্রী ব্লগ সাইট তৈরি করে লাখ টাকা ইনকাম করুন
ড্যনিশ ফুটবল ও ফুটবল ক্লাব
ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের পরে ইউরোপের প্রথম ফুটবল ক্লাব গঠন করে ড্যানিশরা ১৮৭৬ সনে। ক্লাবের নাম ছিলো কোপেন হেগেন বোল্ডক্লাব। ইউরোপের প্রথম ফুটবল ক্লাবটিও গঠিন করা হয় এই ডেনমার্কে ১৮৮৯ সালে। এই সকল বিষয় মিলিয়ে ইউরোপীয়রা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে পর্যন্ত ড্যানিশরা অনেক শক্তিশালী ছিল। যার ফলস্বরুপ ১৯০৮ এবং ১৯১২ সালের অলিম্পিকে তারা পর পর দুবার রৌপ্য পদক লাভ করে।
স্প্যানিশ ফুটবল
স্পেনে ফুটবলের প্রচলন তৈরী হয় মূলত স্পেন দেশে কাজ করতে আসা ব্রিটিশ অভিবাসীদের সাহায্যে। উনিশ শতকের শেষ দিকে ধীরে ধীরে ফুটবল খেলা অভিবাসীদের মাধ্যমে স্পেনের সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ফুটবল খেলাটিকে স্পেনে জনপ্রিয় করার জন্যে তৎকালীন সময়ের স্পেনের রাজা ত্রিয়োদশতম আলফোনসের ভূমিকা অনেকটাই। তিনি ১৯০২ সালের স্পেনে বাস্ক, ক্যাটালনিয়া এবং মাদ্রিদের অঞ্চল গুলোতে বেশ কিছু দলের মাঝে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু এতো কিছুর পরে আঞ্চলিক বিভক্তির কারনে স্প্যানিশ জাতীয় দল গঠন করাটা ছিলো বেশ কঠিন ব্যাপার। একারণেই তারা মূলত ১৯০৪ সালে ফিফার (ফুটবল ফেডারেশন) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে কোনো জাতীয় টিম তৈরী করতে পারেনি।
ইতালীয় ফুটবল
ইতালিতে ফুটবল খেলার সূচনাটা হয়েছিলো মূলত সুইস, ব্রিটিশ এবং ইতালির উচু শ্রেণীর জনগনের মাধ্যমে। যার কারনে বর্তমানে ইতালির ফুটবলে সেখানকার উচু শ্রেণীর মানুষের প্রভাব দেখা যায়। ইতালির ফুটবল খেলার উত্থান স্পেনের সমসাময়িক। উনিশ শতকের শেষ দিকে ইতালির প্রথম ফুটবল ক্লাব গঠন করা হয়। আর ১৮৯৮ সালে ইতালিতে প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়।
ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ফুটবল
ফ্রান্স এবং জার্মানিতে ফুটবলের উত্থান স্পেন অথবা ইতালির সঙ্গে একই সময়ে শুরু হলেও সেখানে ফুটবলের প্রসার ঘটাতে বেশ কিছুটা বেগও পেতে হয়। স্পেন এবং ইতালিতে ফুটবল আসার পূর্বে তেমন কোনো জনপ্রিয় খেলা প্রচলিত ছিলোনা। কিন্তু ফ্রান্স এবং জার্মানিতে পূর্বে থেকেই সাইক্লিং এবং জিমন্যাস্টিকস খেলা সাধারণ মানুষের মাঝে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলো। যার কারণে এ দুটি খেলাকে পাল্লা দিয়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা হওয়াটা খুব বেশি সহজ ছিলো না।
ফ্রান্সের প্রথম ফুটবল টিম গঠিত হয় মূলত স্কটিশ এবং ইংরেজদের হাত ধরে। যদিওবা তখন একই সময়ে কিছু ফরাসি স্টুডেন্ট নিজেদের টিম গঠন করে নেয়। ফ্রান্সে প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা চালু হয় ১৮৯৪ সালে। তারপরে থেকেই মূলত ফ্রান্সে ফুটবল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে আর একের পর এক নতুন নতুন টিম গঠন হয়। তবে হ্যাঁ অনেক দল গঠন হলেও ফ্রান্সে একটিমাত্র ফুটবল ফেডারেশনের জন্ম নিতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। ফ্রান্সে ফুটবল ফেডারেশন প্রথম গঠিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে।
আর হ্যাঁ জার্মানিতে অবশ্য ফুটবল খেলার যাত্রা ছিলো অনেক বেশি কঠিন। কারন জার্মানিতে ফুটবলের প্রথম পরিচয়ের পরে থেকে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে প্রায় ৩০ বছরের মত সময় লেগেছিলো। জার্মানিতে প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৮৭৪ সালে। কিন্তু হ্যাঁ ফুটবল খেলার নিয়ম-কানুন জার্মানির মানুষের কাছে পৌছে যায় ১৮৯১ সালে। তবে তারপর আর জার্মানির ফুটবলকে পিছনের দিকে ফিরতে হয়নি। ঠিক্তার পরবর্তী ১০ বছরে জার্মানিতে ২০০ এর বেশি ফুটবল ক্লাব গঠিত হয় এবং ১০ হাজারের থেকে বেশী ফুটবল খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত খেলায় অংশ গ্রহণ করে। তারপর ১৯০৩ সালে জার্মানিতে ন্যাশনাল পর্যায়ের প্রথমবার ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ পেনড্রাইভ ও কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার ৬টি উপায়
দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতোই দক্ষিণ আমেরিকাতে ও ফুটবল খেলাটির শুরুটা হয়েছে কাজের জন্য সেখানে আসা ব্রিটিশ অভিবাসীদের হাতক ধরেই। দক্ষিণ আমেরিকায় খনিজ পদার্থের প্রাচুর্যের কারনে সেসময়ে ইংল্যান্ড থেকে অনেক লোক কাজের জন্যে সেখানে আসতো, যার কারণে তাদের মাধ্যমেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গুলোতে ফুটবল খেলারটির জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে।
এমনকি এই মহাদেশ টিতে ১৮৬৭ সালে প্রথমবার ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিলো ব্রিটিশদের মধ্যে। তার ২৬ বছর পর দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনাতে প্রথমবার ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। যা বর্তমান সময়ে আর্জেন্টাইন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন শিপ নামে চালু আছে। যদিওবা সেসময়ে খেলোয়াড়রা প্রায় সকলেই ছিলো ব্রিটিশ। তারপর উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রাজিলের প্রথম দল এবং টুর্নামেন্ট শুরু হয়।
সেখানে অবশ্য ব্রিটিশদের আধিপত্যই বিস্তার করছিলো। কিন্তু তার পরবর্তীতে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোর সাধারণ জনগণ ফুটবল খেলাতে অংশ গ্রহণ শুরু করে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দক্ষিণ আমেরিকার জনগনরা ফুটবল দল গুলিতে প্লেয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে শুরু করে।
বিশ্বকাপ ফুটবল
ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে পৃথিবীর সকল মানুষের কাছেই যেন এক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তবে হ্যাঁ এর শুরুটা হয়েছিলো জুলস রিমেট নামক একজন ফরাসি ব্যাক্তির হাত ধরে। তিনি হচ্ছেন আর কেউ না, তিনি হচ্চেন ১৯২১ সালে ফিফার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। অলিম্পিক টুর্নামেন্টকে অনুসরন করে তিনি ফুটবল বিশ্বকাপ এর সূচনা করেন। প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে।
উরুগুয়ের মাঠগুলোকে কাপিয়ে ১৩ টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ গ্রহণ করেছিলো সেই বার। তবে হ্যাঁ স্বাগতিক দল উরুগুয়েই বিজয়ী হয়েছে সেই বিশ্বকাপ। ফাইনাল খেলায় তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জিতে নেয় রিমেট ট্রফি। সে সময়েই বিশ্বকাপ ট্রফির নামকরণ করা হয় ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিমেটের নাম অনুসারেই। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে আরও দুটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৩৪ সালে মোট ১৬ টি দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে এবং ১৯৩৮ সালে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে মোট ১৫ টি দেশ। কেননা সেসময়ে অস্ট্রিয়া কে জার্মানি দখল করে নেয়। তারপরের বেশ কয়েকটি বছর ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছিলো এক অন্ধকার সময়। ২য় বিশ্বযুদ্ধ সে সময় অনেক সমীকরণকেই পাল্টে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালো থাবা
মানব ইতিহাসের আধুনিক সময়ে সবথেকে বেশি মানুষ আহত এবং নিহত হয়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এই যুদ্ধের প্রকোপে সবথেকে বেশি ভুগেছিল ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশ। কিন্ত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো তুলনামূলকভাবে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা ছিলনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশগুলো ফুটবল খেলাতে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করত। বিশ্বযুদ্ধের কারনে তা খর্ব হওয়ায় সেশূন্য স্থান পূরণ করে নেয় লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলো।
যার মাঝে অন্যতম ছিলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং কলাম্বিয়া। সেসময়ে সেই মহদেশের রেডিও এর চল শুরু হওয়ায় সম্পূর্ণ মহাদেশের মানুষ এই খেলা অর্থাৎ ফুটবল খেলা উপভোগ করতে শুরু করে। এমনকি ফুটবল খেলার আমার যে ‘গোল’ শব্দটি ব্যবহার করি তাও তখন সেটা প্রথম উচ্চারিত হয়েছিলো রেবেলো জুনিয়র নামের একজন ব্রাজিলিয়ান বার্তা পাঠকের কন্ঠেই।
অবশ্য ইউরোপ থেকে যে ফুটবল খেলা নাম-নিশানা মুছে গিয়েছে এমনটাও কিন্ত না। যেসকল ইউরোপীয় দেশ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ছিলো তারা ফুটবল খেলাটি অব্যাহত রাখে। যেমন- সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, তুর্কি, স্পেইন, সুইডেন ইত্যাদি। এমন কি ব্রিটেন, ইটালি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এর মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে ও কিন্ত ফুটবল খেলা হয়েছিলো। জার্মানিই ১৯৪২ সালে তার দখলকৃত এবং বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করে। এমনকি ১৯৪৪ সালে বার্লিনের পতনের মাত্র কয়েক মাস পূর্বেই জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় জার্মানিতে।
আরও পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া মোবাইলফোন খুঁজে পাওয়ার উপায়
বিশ্বকাপের নবযাত্রা
২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি বিশ্বকাপ ফুটবলও হালে পানি পেয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ১৯৪৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা কিন্ত হয়নি। ১৯৫০ সালে সেই বিশ্বকাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ব্রাজিলে। আর সেই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম তৈরি করে রিও ডে জেনেরো শহরে। মারকানা নামের এই স্টেডিয়ামের ফাইনাল ম্যাচ দেখেছিলো প্রায় ২ লাখের বেশি মানুষ। যা আজ পর্যন্ত রেকর্ড হয়ে আছে। তবে সে সময় ব্রাজিলিয়ানদের চরম হতাশ করে দেয় সেই বারের ২-১ গোলে হারিয়ে কাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে।
ফুটবলে প্রাণসঞ্চার
ইউরোপে ফুটবল
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইউরোপের কান্ট্রির দেশগুলো আবারো ফুটবলের দিকে বেশ ভালোই ঝুঁকে পড়ে। ১৯৪৯ সালে ব্রিটেনে ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তা তুঙ্গস্পর্শী আকার ধারণ করে। এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা ৬০ এর দশক অবধি স্থায়ী হয়েছিল। তবে লীগ পর্যায়ে ব্রিটিশরা দারুণ দেখালেও বিশ্বকাপের ময়দানে গল্পটা ছিলো ভিন্ন রকম। ১৯৫০ সালে আবার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমে প্রথম খেলাতে চিলিকে পরাজিত করে তারা। কিন্তু পরবর্তী ম্যাচে আনার হেঁড়ে বসে আমেরিকার কাছে। যা ফুটবল খেলার ইতিহাস এ অন্যতম বিপর্যয়। অবশ্য আমেরিকার ফুটবল ইতিহাসে এটি একটি অন্যতম সোনালি অধ্যায় ছিলো। তারপর স্পেনের কাছে হেঁড়ে গিয়ে ব্রিটিশদেরকে ঘরে ফিরতে হয়।
অন্যদিকে বিশ্বযুদ্ধে হেরে গিয়ে বসে থাকা জার্মানির গল্পটা কিন্তু অন্য রকম। বিশ্বযুদ্ধে হেঁড়ে গিয়ে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপটা কিন্ত ঠিকই জয়লাভ করে নেয় তারা। হেব্বি শক্তিশালী হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভাবনীয়ভাবে জয়লাভ পশ্চিম জার্মানি। আর তাদের সেই জয়লাভ করার পেছনে অন্যতম কারণ ধরা হয়েছিলো তাদের পায়ের জুতো গুলোকে। জার্মান প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস Adidas এর প্রস্তুতকৃত জুতো গুলো কাদার বিরুদ্ধে অধিক বেশি কার্যকারিতা ছিলো সে খেলাতে জয়লাভের অন্যতম নিয়ামক।
ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (UEFA)
ক্লাব ফুটবলের স্বর্গ বলা হয় ইউরোপকে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে আন্তর্জাতিক ফুটবল ব্রাজিল vs দক্ষিণ আমেরিকার এর আধিপত্য ছিলো। কিন্তু সেসময় ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয় দলগুলো ছিলো মূলত ইউরোপের। ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মূলত ইউরোপ এর ফুটবল খেলুড়ে ক্লাবগুলির একটি গঠিত সংগঠন।
১৯৫৪ সালে গঠিত এই সংগঠনটির উদ্যোগে ১৯৫৫ সালের প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয় দা ইউরোপিয়ান কাপ। যা বর্তমান সময়ে পরিচিত ‘চ্যাম্পিয়ন্স লীগ’ নামে। আর এসকল ক্লাব ফুটবলের মাধ্যমেই ইউরোপ এর সাধারণ মানুষের মধ্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সেসময় ইউরোপে টিভির বহুল প্রচলন সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে করে তুলেছিল আরো বেশি বেগবান।
আরও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সেরা ৫টি ওয়েবসাইট
পেলেঃ ফুটবলের রাজা
পৃথিবীতে এমন কোনো ফুটবলপ্রেমী নেই যে আসলে পেলেকে চিনেন না। ১৯৪০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৮ সালে তিনি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জয় লাভ করেন। ফুটবলের রাজা বদৌলতে সামনের বছর গুলোতেও ব্রাজিলের আধিপত্য বজায় ছিলো। ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে ও জয় লাভ হয় ব্রাজিল।
এই সম্পূর্ণ সময়টা জুড়ে ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে পেলে ছিলো তুলনাহীন। সকল রেকর্ড চূর্ণবিচুর্ণ করে পেলে ‘ফুটবলের রাজা’ উপাধিতে ভূষিত হোন। তাছাড়াও ফিফা কর্তৃক পেলেলে শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মাননা দেয়া হয়। ফুটবলের ইতিহাস বলতে গেলে ব্রাজিল এবং পেলের কথা বলতেই হবে।
কোপা আমেরিকা
ফুটবল খেলার জন্ম ইউরোপের একটি দেশে হলেও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোই ফুটবলের সবথেকে বেশি আধিপত্য বিস্তার করছে। সেই ১৯১০ সাল থেকে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোর মাঝে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে। ১৯৭৫ সাল থেকে যেটা মানুষের মাঝে পরিচিতি লাভ করে ‘কোপা আমেরিকা’ এই নামে। দি সাউথ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন এর তত্ত্বাবধায়নে এটি সংগঠিত কোপা আমেরিকা বহু পূর্বে থেকে সারা বিশ্বে বহুল জনপ্রিয়। কিছুদিন পূর্বে ব্রাজিল vs আর্জেন্টিনা ম্যাচটি হয়তোবা এই প্রজন্মের অনেকের দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
রাজনীতি, যুদ্ধ ও ফুটবল
ফুটবল কোনো নিছক খেলা নহে। লাখো মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকায় স্বভাবতই রাজনীতিতে এই খেলাটির প্রভাব অনস্বীকার্য। মর্ডান ফুটবলের প্রথম দিনগুলো থেকেই বড় বড় রাজনীতিবিদরা ফুটবলের শীর্ষ তারকা খেলোয়াড়দের দিয়ে নিজেদের প্রচারযন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতো। সেই ধারাটি বর্তমান সময়ে অব্যাহত রয়েছে।
তাছাড়াও শত্রু দেশগুলোর বিরুদ্ধে খেলার মাঠে বিজয় যেন অনেক নাগরিকের কাছে এক পরোক্ষ বিজয় বলে মনে হয়ে থাকে। ফুটবল খেলার প্রতি মানুষের আবেগকে পুঁজি করে অনেক শাসকই প্রভাব বিস্তার করতে চায় বা চেয়েছেন। তার উহদারণ বেনিটো মুসোলিনি থেকে শুরু করে স্বয়ং হিটলার ও এর ব্যাতিক্রম কিন্ত না। এমনকি আর্জেন্টিনার শাসক হুয়ান পেরন তার দেশকে ১৯৪৯ সালে কোপা আমেরিকা এবং ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে দেননি।
কেনা সেসময়ে আর্জেন্টিনার খেলার হার জনগণের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দিতে পারতো। এছাড়াও ইতিহাসে দেখা যায় ফুটবলকে অনেক সময় রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ সমস্যার কারনে আফ্রিকান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল দলকে বারবার বয়কট করেছে তা হয়তো আপনাদের সকলের জানা।
শুধু রাজনীতিতেই যে ফুটবল খেলার ব্যবহার আছে তা কিন্ত নয়। এমনকি শুধুমাত্র ফুটবলকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের ইতিহাস ও আছে। ১৯৬৯ সালের এল সালদাভর এবং হন্ডুরাসের মাঝে ১০০ ঘন্টাব্যাপী একটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো যা ইতিহাসে ১০০ ঘন্টার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
শেষকথা
যুগে যুগে ফুটবল খেলার সারাবিশ্বের মানুষের মনের মাঝে স্থান করে নিয়েছে। লিজেন্ড খেলোয়াড়দের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয় লাখো কোটি মানুষ। শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে ফুটবলের এইযে জনপ্রিয়তা তারই কারণে ফুটবল খেলাকে এক কথায় বলা হয় অসাধারণ। আঁশা করি, ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকা বাদ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের দেশগুলো এবং ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লিখে রাখবে। বিশেষত আমাদের দেশ বাংলাদেশ হয়তোবা একদিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে গর্বের সঙ্গে অবস্থান করবে। সে সময়ের অপেক্ষায় আমরা।
আরও পড়ুনঃ AC কিভাবে কাজ করে? AC কেনার সময় কি কি জানা দরকার?