নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় — নতুন মোবাইল কেনার পরবর্তী মূহুর্তটা সবার কাছেই অনেক আনন্দের। আপনি হয়তোবা প্রথমবারের মতো মোবাইল ক্রয় করলেন, তাই হয়তো আপনি ঠিক জানেন না যে, এখন মোবাইল ফোনে কি কি করতে হবে। অথবা পূর্বে মোবাইল ব্যবহার করলেও পূর্বের মোবাইলের মতো করে কিভাবে আপনার নতুন মোবাইল ফোনটিকে সাজাবেন তা বুঝে পারছেন না। এছাড়াও আপনি নতুন মোবাইল ফোন কেনার পরে আরও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই আপনাদের জন্যে আজকের এই আর্টিকেলে নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আমরা অনেকেই নতুন মোবাইল কেনার পর কি করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারিনা। এর জন্য অন্যের নিকট মোবাইল নিয়ে যাই। স্মার্টফোন কেনার পরে খুব জরুরি একটা বিষয় যা আমরা অনেকেই জানিনা সেটা হল আপনার স্মার্টফোনটি যেই কোম্পানির বা ব্রান্ডের কিনেছেন সেই কোম্পানির একাউন্টে আপনার একটি নিজস্ব একাউন্ট খুলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যেমনঃ প্রতিটি শাওমি সেটে রয়েছে তাদের কোম্পানির সাথে আন্ত ইন্টারনেট কানেকশন।
যদি আপনি শাওমি সেট কিনেন এক্ষেত্রে আপনি আপনার মোবাইলে নিজস্ব একাউন্ট খুলতে পারবেন। আর এই অ্যাকাউন্টটি শাওমি কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটরের হেড অফিস আপনার ডিভাইসটি সেভ থাকবে। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খুললে আপনি দুটি সুবিধা পেতে পারেন। প্রথমত হল যদি কোন কারনে আপনার ডিভাইস হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় খুব সহজেই আপনি আপনার সেটটি কোথায় আছে তার লোকেশন জানতে পারবেন। দ্বিতীয়টি হল অনেক সময় আপনার এই একাউন্ট করার কারণে কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্রি স্পেস দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ কোম্পানির ব্যক্তিগত বিষয়।
নতুন মোবাইলের বক্সটি ভালোভাবে দেখে নিন
আপনার পছন্দের মোবাইল ফোনটি যদি অনলাইনে অর্ডার করে কিনে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে ডেলিভারি পাওয়ার পরে অবশ্যই মোবাইলের বক্সটির ভেতরের অংশগুলোকে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করুন। ভালোভাবে দেখে নিন ফোনটির ডেলিভারির সময়ে বক্সটির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়েছে কি-না এসকল বিষয় খুঁটিয়ে দেখুন। ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে এই ধরনের কোনো ত্রুটি হয়ে থাকলে তবে উক্ত প্রোডাক্ট ফেরত দেয়ার সুবিধে রয়েছে। তাই নতুন মোবাইল ব্যবহারের শুরুর আগেই এই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
আর যদি আপনি অনলাইন থেকে মোবাইল ফোন না কিনেন, তাহলে মোবাইল ফোনের বক্সটিতে অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমনঃ ইয়ারফোন, চার্জার ইত্যাদি এসকল রয়েছে কি-না সেগুলো চেক করে নিবেন। এবং মোবাইল ফোনের ওয়ারেন্টি কার্ড ও অন্যান্য সকল কাগজপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কি-না সেটা ভালোভাবে যাচাই করে নিন।
এছাড়াও মোবাইল ফোনটি অফিশিয়াল শো-রুম থেকে না কেনা হলে অনেক সময় দেখা যায় দোকানদাররা চার্জার, ইয়ারফোন এই সকল জিনিস পত্র আলাদাভাবে বিক্রি করার জন্যে রেখে দেয়। এজন্য এই সকল জিনিসপত্র আসে কিনা তা সম্পর্কে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ অন্যের ইমু নাম্বার জানার উপায় | অন্যের ইমু নাম্বার দেখার উপায়
নতুন ফোনে গুগল একাউন্ট লগিন করুন
এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনটি চালু করলেই গুগল একাউন্ট লগ ইন করার অপশন চলে আসে। এই অপশনটিকে বাদ না দিয়ে গুগল একাউন্টে অর্থাৎ জিমেইল একাউন্টে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে নিন। কেননা এই অপশন স্কিপ করলেও আপনারা পরবর্তীতে ফোনের গুগল প্লে স্টোর ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য এবং অন্যান্য সকল কাজের জন্য গুগল একাউন্টে একসময় লগইন করতেই হবে। গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করলেই আপনারা গুগল ড্রাইভে এবং গুগল ফটোসে আগের স্মার্টফোন থেকে যা যা প্রয়োজনীয় ফাইল আপলোড করেছিলেন সে সকল ফাইলের এক্সেস পেয়ে যাবেন।
অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করুন
নতুন মোবাইল ক্রয় করার পর ফোনে কোম্পানী কর্তৃক পূর্বে থেকেই কিছু অ্যাপ কিংবা ফাইল দেয়া থাকে। ফোনে দেওয়া ডিফল্ট অ্যাপগুলোর মাঝে কিছু কিছু অ্যাপ বা ফাইল আপনার দরকার হতে পারে, তবে আমার জানা মতে বেশিরভাগ অ্যাপ বা ফাইল আপনার কোনো কাজে আসবেনা। যেমনঃ ফোনে গুগল ড্রাইভ/গুগল ফটোস এই অ্যাপগুলো ফোন আগে থেকেই দেওয়া থাকে।
কেউ সাধারণত মোবাইল ফোনের কোম্পানির আলাদা অ্যাপ স্টোরেজ হিসাবে ব্যবহার করেনা। কেননা সেগুলো গুগল অ্যাপ গুলোর সমমানের না। যেহেতু এই সকল অ্যাপ গুলো ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়না তাই আপনার ফোনের মেমোরি অযথা ব্যবহার করবে। তাই অপ্রয়োজনীয় এসকল অ্যাপ রিমুভ করুন।
নতুন ফোনে দরকারি অ্যাপ ইনস্টল করুন
নতুন মোবাইল কেনার পরে উক্ত ফোনে আপনার প্রয়োজনীয় সব অ্যাপ ইন্সটল করা থাকবেনা। তাই আপনার জন্য দরকারি অ্যাপগুলোকে গুগল প্লেস্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপস্টোর থেকে ডাউনলোড করুন। জেনে রাখা ভালো যে গুগল প্লেস্টোর কিংবা এরকম বিশ্বস্ত কোনো সোর্স ছাড়া অন্য কোনো সোর্স থেকে অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করবেন না। যদি আপনি অবিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করেন তাহলে আপনার ফোনে ভাইরাস ঢোকার সুযোগ থেকে যায়।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়
অ্যাপ আপডেট করুন
নতুন মোবাইলে যেসকল অ্যাপ পূর্বে থেকেই ডিফল্ট ভাবে দেওয়া থাকে সেগুলোর বেশিরভাগ অ্যাপ বেশ পুরাতন বা নন আপডেট হয়ে থাকে। যেকোনো অ্যাপের পুরাতন ভার্সনে বিভিন্ন ধরনের ফিচারস কম হয়ে থাকে। তাই নতুন ফোনে গুগল প্লে-স্টোর অথবা অ্যাপল অ্যাপস্টোর কিংবা অন্যান্য সোর্স থেকে সেসকল অ্যাপের আপডেট ভার্সন ইনস্টল করুন। অ্যাপ আপডেট করার কারণে আপনি সেই অ্যাপগুলোকে ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন ও অ্যাপগুলির সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারবেন।
ফোনটি পুরোপুরি চার্জ করুন
নতুন মোবাইল কেনার পরে ফোনটিকে আপনার সুবিধে মতো ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তোলার জন্যে ফোনটি নিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে কাজ করার প্রয়োজন হবে। আর মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ না থাকলে বিভিন্ন কাজের প্রতি বিঘ্ন হতে পারে। তাই নতুন মোবাইল সেটআপের কাজ শুরু করার আগে মোবাইল ফোনটিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ দিতে হবে। যার কারণে কাজের মাঝে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হবেনা।
নতুন ফোনে ওয়াইফাই কানেক্ট করুন
নতুন মোবাইলে আপনার প্রয়োজনীয় সকল অ্যাপগুলোকে ইনস্টল করার প্রয়োজন হবে এবং বিভিন্ন ফাইল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করতে হবে। ফোনে ইন্টারনেটের এমবি প্যাক দিয়ে এটি করা বেশ খরচ সাপেক্ষ্য হবে এবং এটি করতে ইন্টারনেটের গতিও অনেক কম হতে পারে। তাই নতুন ফোনটিকে ওয়াইফাইয়ের সঙ্গে কানেক্ট করে নেয়াটাই অনেক উত্তম হবে। যার কারণে আপনার তেমন বেশি খরচ হবেনা, প্রয়োজনীয় অ্যাপ ও ফাইলগুলো দ্রুততার সাথে ডাউনলোড করা সম্ভবপর হবে এবং ডাউনলোড করার সময়ে এমবি শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হবেনা।
আরও পড়ুনঃ জিমেইল আইডি কিভাবে খুলবো
ব্লোটওয়্যার আনইন্সটল করুন
ব্লোটওয়্যার বলতে বোঝায় বাণিজ্যিক অ্যাপ যেগুলো পূর্বে থেকে মোবাইল কোম্পানি থেকেই ইনস্টল করা থাকে। সাধারণত এই সকল অ্যাপ আমাদের তেমন কোনো কাজে আসেনা, বরং এই অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান থাকে এবং মোবাইলের চার্জ দ্রুততার সাথে শেষ করে ফেলে এবং মেমোরি স্পেস দখল করে থাকে। তাই নতুন মোবাইল কেনার পরে এই সকল ব্লোটওয়্যার গুলোকে রিমুভ করুন। যদি আপনার মোবাইলের পলিসির কারণে অ্যাপগুলিকে রিমুভ না করা যায়, তবে উক্ত অ্যাপগুলোকে সেটিংস থেকে ডিজেবল করুন।
মোবাইলের সিকিউরিটি নিশ্চিত করুন
আপনার নিজের মোবাইলের সকল তথ্যাবলী কেবলমাত্র আপনার একান্তই ব্যাক্তিগত, তাই এই সকল তথ্যাবলীর সিকিউরিটি নিশ্চিত করাটাও অতিব প্রয়োজনীয়। মোবাইলের সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্যে মোবাইলের সেটিংস অপশনে গিয়ে সিকিউরিটি অপশনে গিয়ে আপনারা পাসওয়ার্ড সিস্টেম, ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক কিংবা প্যাটার্ন লক সেটাপ করে নিন। এই সেটিংস চালু করার কারণে আপনার ফোনে আপনি ব্যতীত অন্য কেউ আপনার মোবাইল ওপেন করতে পারবেনা এবং আপনার ব্যাক্তিগত তথ্যগুলো থাকবে নিরাপদ।
তাছাড়া আপনি চাইলে আলাদা আলাদা অ্যাপের মাঝে যেমনঃ ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ফটো গ্যালারি এসকলের জন্য অ্যাপলক ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপলক ব্যবহার করার কারণে অন্য কেউ আপনার মোবাইলের এই সকল অ্যাপে ঢুকতে পারবেনা। এতে করে আপনার ব্যক্তিগত টেক্সট, ছবি ইত্যাদি থাকবে নিরাপদ।
নতুন ফোনে ভালোমানের কভার ইউজ করুন
ভালোমানের মোবাইল কভার ইউজ করুন। কেননা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার নতুন মোবাইল ফোনটি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তাই মোবাইল ফোনে যাতে কোনো রকম দাগ না লাগে তাই অবশ্যই ফোনের জন্যে ভালোমানের একটি ব্যাক কভার ইউজ করুন। বর্তমানে বাজারে ফোনের বিভিন্ন মডেলের জন্যে আলাদা আলাদা ব্যাক কভার পাওয়া যায়। আর মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে যাতে নিরাপদ থাকে তাই মোবাইল ফোনের উপর গ্লাস প্রোটেক্টর ব্যবহার করুন।
গ্লাস প্রোটেক্টর ব্যবহার করার কারণে মোবাইল ফোনটি আঘাত প্রাপ্ত হলে হয়তো প্রোটেক্টরটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্ত ডিসপ্লে ভালো থাকবে। আর এই কাজটি আপনি সহজেই কম খরচেই করতে পারবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্লাস প্রোটেক্টর খুব কম টাকায় পরিবর্তন করতে পারবেন। আর গ্লাস প্রোটেক্টর ব্যবহার করার কারণে কিন্তু মোবাইলের দামী ডিসপ্লেটি রক্ষা পাবে। তাছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় যে, মোবাইলের ক্যামেরা ফোনের বডির থেকে একটু বৃদ্ধি থাকে। সেক্ষেত্রে সুরক্ষার জন্যে আপনারা ক্যামেরা প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বৃষ্টিতে মোবাইল ভিজে গেলে করনীয়