ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় - ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার সহজ উপায় — দৈনন্দিন জীবনে চুল পড়া সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত ছেলেদের মানে যাদের এখনো চুল পড়ার মতো বয়স হয়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আসলে ছেলেদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু ভুলের জন্য চুল পড়তে থাকে। আর সেই ভুল গুলো আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করে থাকি। তো সেই ভুল গুলো নিচে দেওয়া হল। চুলের যত্ন নেয়ার ১০ টি কার্যকর টিপস। মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায়।
চুল পড়ার কারণ
১. যদি আমরা চুল পড়ার কারণ না জানি তাহলে তার সমাধান করতে পারব না। তাই আগে ভুলগুলো জেনে নিন। আমরা চুলের ঠিকমতো যত্ন করি না। চুলের মধ্যে বিভিন্ন রকম হেয়ার প্রোডাক্ট ( হেয়ার জেল, কালার) বেশি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে ফেলি। এইসব হেয়ার প্রোডাক্ট গুলো কেমিক্যাল এ ভর্তি। কেমিক্যাল আমাদের চুলকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এছাড়া চুলে বেশি পরিমাণে হেয়ারস্টাইল করা প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে আমাদের চুল খারাপ হয়ে যায়। এবং চুল ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যেতে থাকে। যার ফলে চুল বেশি পরিমাণে পড়তে শুরু করে।
তাছাড়া আমরা চুলের কখন কি লাগাতে হবে। কি নিয়মে লাগাতে হবে এবং কতটা ব্যবহার করতে হবে যেসব বিষয়ে কোনো ধারণা থাকে না। যার ফলে আমরা ভুল পদ্ধতিতে চুল পরিচর্যা করে চুলের উপকার পাওয়ার বদলে ক্ষতি করে থাকি। এর ফলে চুল প্রচুর পরিমাণে পড়তে থাকে।
২. অনেক ছেলেরা কমবয়সে বেশি পরিমাণে হস্তমৈথুনের নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ছেলেদের ই এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি কি ভাবছেন হস্তমৈথুন করে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে। হস্তমৈথুনের ফলে মানসিক ভাবে যেমন সমস্যা দেখা দেয় তেমনি শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই যদি চুলের আয়ু বাড়াতে চান তাহলে হস্তমৈথুন করা ছেড়ে দিন। হস্তমৈথুন করা ছেড়ে দিলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
৩. জেনেটিক কারনে আমাদের চুল পড়া শুরু হয়। জেনেটিক কারন বলতে আপনার পরিবারের কারো চুল দুর্বল থাকলে আপনার ও চুল দুর্বল হতে পারে। কিছু টিপস্ ফলো করলে জেনেটিক চুল পড়া বন্ধ করা যায়। এক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় আপনার চুলের যত্ন বেশি পরিমাণে করতে হবে।
৪. আয়রন এর ঘাটতি দেখা দিলে চুল পড়া সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে আয়রন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ পান্তা ভাত।
আরো পড়ুনঃ অনুপ্রেরণা মূলক উক্তি | জীবন নিয়ে উক্তি | ভুল নিয়ে উক্তি | স্বপ্ন নিয়ে উক্তি
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া বন্ধ করতে হলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস জল পান করতে হবে। যার ফলে পেটের মধ্যে জমে থাকা ময়লা প্রস্রাব এর মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। তাছাড়া আমাদের শরীরের মধ্যে যে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয় সেগুলো বেরিয়ে যায়। যার ফলে চুল পড়া আটকানো যায়।
জল পান করার ১০ মিনিট পর নিম পাতা ধুয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খান। নিম পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এইসব উপাদান গুলো চুলের ফলিকলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। যার ফলে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। আপনি ৫ থেকে ৬ টি নিমের পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খান তাহলে এর থেকে বেশী উপকার পাবেন। তাছাড়া চুল পড়া বন্ধ করতে হলে খাবার এর প্রতি নজর দিতে হবে।
চুল পড়া বন্ধ করতে কি কি খাওয়া উচিত।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা কিছু ভুল খাদ্য গ্রহণ করি। এর ফলে আমাদের চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে থাকে। কি কি খাবার খেলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে। খাবার এর মধ্যে কিছু পুষ্টিকর উপাদান থাকে যেগুলো আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। এবং নতুন চুল গজায়।
চুলের জন্য কি কি উপাদান দরকার
চুলের জন্য যেসব উপাদান দরকার সেগুলো হলো বায়োটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, জিংক, আয়রন, প্রোটিন ও ভিটামিন সি। এই সব পুষ্টিকর উপাদান গুলো খুব সহজেই কিছু প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ এর মাধ্যমে পুরন করতে পারেন।
বায়োটিন
বায়োটিন প্রাকৃতিক ভাবে চুল পড়া বন্ধ করে এবং দ্রুত নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। বায়োটিনযুক্ত কিছু খাবার হলঃ ডিম খেতে পারেন। ডিমে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায়। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে দিনে ২ টি ডিম খেতে পারেন। এছাড়া স্যালমন মাছ, অন্যান্য মাছ, ফুলকপি, টমেটো, গাজর প্রভৃতি খাবারের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়োটিন পাওয়া যায়।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড
এবার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এর বিষয়ে কথা বলা যাক। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার হলঃ স্যালমন মাছ এবং কদু। এই খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পেয়ে যাবেন।
আরো পড়ুনঃ মায়ের রক্তের গ্রুপের সাথে সন্তানের রক্তের গ্রুপ মিলেনা কেন?
জিংক
জিংক আমাদের চুলের বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। জিংক পাওয়ার জন্য আপনি কদু খেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন রকম ফলের মধ্যে জিংক পাওয়া যায় যেমন খেজুর।
আয়রন
আমাদের শরীরের মধ্যে যখন আয়রনের অভাব দেখা যায় তখন চুল পড়া শুরু হয়। তাই আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আপনি চাইলে পালং শাক ও ডাল খেতে পারেন। এই দুটি খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মতো আয়রন পেয়ে যাবেন।
প্রোটিন
প্রোটিন আমাদের শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রোটিন শুধু চুলের জন্য নয় পুরো শরীরকে পরিচালনা করার জন্য প্রোটিন সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করে। আমাদের চুল ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্যারোটিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে চুল পড়া বন্ধ হতে চাই না। এক্ষেত্রে প্রতিদিন নিজের ওজনের হিসেবে প্রোটিন নেওয়া দরকার। প্রোটিন যুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে পনির,দই,দুধ, ডিম,মাছ, মাংস, ছোলা, বাদাম অন্যতম। এইসমস্ত খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি
অন্যান্য উপাদান গুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভিটামিন সি অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি এর জন্য আপনি লেবু, কমলা লেবু, টমেটো , আমলকী ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করুন। এইসব খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে চুলে খুশকি ও চুল পড়া বন্ধ হবে। তাছাড়া চুল খুব দ্রুত তারাতারি গজাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কি কি করতে হবে
নিয়মিত তেল ম্যাসাজ
নিয়মিত মাথায় তেল ম্যাসাজ করলে চুল পড়া আটকানো যায়। তাছাড়া নিয়মিত তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। এছাড়া নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে নতুন চুল গজায়। তাই কেমিক্যাল ফ্রি তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করুন। কেমিক্যাল আমাদের চুলকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি করে। এমনকি চুলকে রূক্ষ শুষ্ক করে তোলে। তাই প্রাকৃতিক তেল দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন তেল ব্যবহার করুন।
নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার
চুলের যেমন তেলের প্রয়োজন তেমনি শ্যাম্পুর ও প্রয়োজন। আমাদের ব্যস্ত জীবনে বাইরে ধুলো বাতাস চুলের স্ক্যাল্প এ জমে খুসকি এবং ইনফেকশন এর সৃষ্টি করে। তাই চুলকে নিয়মিত পরিষ্কার করাটাই সবচেয়ে উত্তম কাজ। কিন্তু চুলের মধ্যে শুধু কেমিক্যাল ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে।
তাই সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পুর ব্যবহার করলে কোন ক্ষতি হবে না। আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর আমাদের চুল একেবারে শুকিয়ে যায়। আসলে কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে এটি হয়।
হেয়ার মাস্ক
হেয়ার মাস্ক যে চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়ক এবিষয়ে কোন সন্দেহই নেই। তাছাড়া হেয়ার মাস্ক শুধু চুল পড়া বন্ধ করার সাথে সাথে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এবং চুল ঘন ও লম্বা করতে হেয়ার মাস্ক এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নিয়মিত হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ করা যায়।
হেয়ার মাস্ক তৈরি করার জন্য বাজার থেকে একটা ডিম কিনে নিয়ে আসুন। তারপর ২ চামচ নারকেল তেল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবং চুলে অ্যাপ্লাই করুন। ১ ঘন্টা পর একটা কেমিক্যাল ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা | মেথির উপকারিতা চুলের জন্য