ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা - মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কিডনি এবং সবচেয়ে প্রচলিত শারীরিক রোগ হচ্ছে ডায়াবেটিস। এক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা ও ডায়াবেটিস হলে আমাদের খুব মেপে খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে।
কারণ আমাদের খাবারের উপর নির্ভর করেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এবং আমরা যেই খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরের পক্ষে উপকার হবে এবং কিডনির সমস্যা ও ডায়াবেটিস সমস্যাগুলো দূর হবে সেই সকল খাবারের বাইরে অন্য সকল খাবার গ্রহনে আমাদের শারীরিক রোগ গুলো বৃদ্ধি পেতে পারে। কিডনী আমাদের শরীরের ছাকনি স্বরূপ কাজ করে। যা আমাদের দেহের প্রসাব তৈরিতে সাহায্য করে। কিডনী সমস্যা সাধারন সমস্যা নয় এটির সমস্যা হলে অন্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
অপরদিকে ডায়বেটিস হয় আমাদের আমাদের শরীর নিজে নিজে যখন ইনসুলিন তৈরী করতে পারে না। যার ফলে রক্তে শর্করা ও গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হতে থাকে। কারন প্রতিটি মানবদেহে ইনসুলিন মানুষের শরীরের কোষগুলিতে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তাই ডায়বেটিস ও কিডনী রোগ গুলোর ক্ষেত্রে খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খাদ্যতালিকা প্রস্তুতের সময় অবশ্যই ব্যাক্তির অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলোকে আমলে রেখেই খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে হয়। চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা ডায়াবেটিস ও কিডনী রোগীদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানিঃ
{tocify} $title={Table of Contents}
ডায়াবেটিস হলে যে সকল খাবার খাবেন
গবেষনা অনুযায়ী ডায়াবেটিস অসংক্রামক রোগ যা মহামারি রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে এমন পরিবার পাওয়া যাবে না যেখানে কোন ডায়বেটিস রোগী নেই। ডায়বেটিস মূলত শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সমস্যা তৈরি করে এমন একটি রোগ।
যার ফলে দেহ ইনসুলিন তৈরীতে ব্যার্থ হয়। আমাদের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় সুগারকে গ্রহণ করার জন্যে। এই সুগার শরীরের শক্তি হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস হলে এজন্যই ঘন ঘন প্রসাব হয়, গলা শুকিয়ে যায়, ওজনে পরিবর্তন হয়, শরীরে দূর্বলতা আসে, কোন ঘা সহজে শুকায় না, রক্তনালী ধংস হয়, স্নায়ু তন্ত্রে সমস্যা হয়।
ডায়াবেটিস ৪ ধরনের হয়ে থাকেঃ টাইপ-১, টাইপ-২, গেস্টেশনাল ও অন্যান্য (রক্তে শর্করার কোন বৃদ্ধি পায় না)। ডায়াবেটিস হলে খাওয়া দাওয়া অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। চলুন জেনে ডায়াবেটিস রোগী কোন খাবার খেতে পারবেনঃ
(ads)
১) সকল ফলই ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন। কারন ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যান্ত ঊপকারী। যেমনঃ পেপে, তরমুজ, ডালিম, লিচু, মালটা ইত্যাদি।
২) শাক-সবজি ডায়াবেটিস হলে নিয়মিত গ্রহন করতে হবে। যেমনঃ বাধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক, লেটুস পাতা, গাজর, করলা ইত্যাদিতে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোর এর পরিমাণ কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ শাকসবজি জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস রোগের হার ১৪ শতাংশ কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায়
ডায়বেটিস থেকে বাঁচতে যে সকল খাবার পরিহার করতে হবে
কারো যদি প্রি ডাইবেটিস থাকে অর্থাৎ ডায়াবেটিস হওয়ার আগ মুহূর্ত সে ক্ষেত্রে যদি আপনি কিছু খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই কিছু কিছু খাবার আমাদের পরিহার করতে হবে ডায়াবেটিস হওয়ার থেকে মুক্ত পেতে কারন এ সকল খাবার গুলো আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমানয়ে বাড়াতে থাকে।
১) আলুঃ আলুতে প্রচুর পরিমান শর্করা থাকে। তাই দীর্ঘদিন প্রচুর পরিমাণে নিয়মিত খাবারের সঙ্গে আলু খেলে আমাদের শরীরে আস্তে আস্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে এক পর্যায়ে ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই আলুটা একটু কম খাওয়ায়ই শ্রেয়।
(ads)
২) এনার্জি ড্রিঙ্কঃ এনার্জি ড্রিংকসে প্রচুর পরিমাণে সুগার দেওয়া হয়ে থাকে। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে তাই এনার্জি ড্রিঙ্ক আমাদের ডাইবেটিস হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
৩) আইসক্রিম ও চিজঃ ফুল ফ্যাট জাতীয় খাবার আমাদের রক্তে শুগারের পরিমান বাড়িতে দেয়।
৪) সাদা চিনিঃ যাঁদের ডায়বেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্র সাদা চিনিকে বিষ বললেও ভুল হবে না। কারন চিনিতে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালরি থাকে।
আরো পড়ুনঃ কিটো ডায়েট চার্ট
ডায়বেটিস হলে খাবার তালিকা - ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
সকালের নাস্তাঃ ১টি গমের রুটি ও ১ গ্লাস দুধ বা স্কিন মিল্ক। এগুলো না হলে ১ টি মুরগির সিদ্ধ ডিম এবং কিছু সিদ্ধ সবজি।
দুপুরের খাবারঃ ডায়বেটিস রোগীদের জন্য দুপুরের খাবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ।দেড় কাপ ভাত সাথে মাছ বা মাংস ফ্যাট ছাড়া ৬০ গ্রামের মতো অথবা ১ কাপ পাতা যুক্ত শাক খাকবে অবশ্যই, বাকী দেড় কাপ অন্যান্য সবজি সাথে খেতে হবে। এছাড়া ১ কাপ মাঝারি ঘন ডাল।
বিকেলের নাস্তাঃ বিকাল ৫/৬ টার মধ্যে কিছু সিজনাল ফল খেতে হবে। কিন্তু আম, কলা, কাঁঠাল কম খেতে হবে। সাথে বাদাম খাতে হবে।
রাতের খাবারঃ রাতে রুটি অথবা ভাত, ১/২ কাপ ভাত অথবা ১ টা আটার রুটি সাথে মাছ বা মাংস ফ্যাট ছাড়া।
কিডনীর সমস্যা হলে যে সকল খাবার খাবেন
একটি গবেষনায় দেখা গেছে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে কিডনী রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০%। তাই কিডনি সঠিক নিশ্চিত করতে প্রতিরোধের ওপর জোর দেন ডাক্তাররা। কিডনী আমাদের দেহের বর্জ্য পদার্থকে পরিশোধন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হরমোন নিঃসরণ, শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য, প্রস্রাব তৈরি এবং অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে। যার ফলে এটি সমস্যা হলে দেহে অন্যান্য রোগ গুলো মাথা নাড়া দিয়ে ওঠে। কিডনীর সমস্যা হলে যে সকল খাবার খাবেন-
১) পেয়াজঃ প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। পেয়াজ রক্তের চর্বি দূর করে এবং কিডনী সুস্থ রাখে।
(ads)
২) রসুনঃ রসুনের ইনফ্লেমাটরি গুণ মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং কিডনী ঠিক রাখে।
৩) আপেলঃ কথায় আছে একটি আপেল নিজেকে ডাক্তার থেকে দূরে রাখতে পারে। তাই বুঝাই যায় আপেল কতটি গুনগুন সম্পূর্ণ। তাই ছয় মাসের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে আপেল নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকবেন।
৪) ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমান ফ্যাট থাকে। যা কিডনির জন্য খুব ভালো। তাই প্রতিদিন একটা অথবা দুইটি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন মূলত আপনার বয়স ও ওজন অনুযায়ী ডিম খাওয়া ভালো।
৫) দারুচিনিঃ দারুচিনি কিডনির ফাংশন এর উন্নতি ঘটায়। প্রতিদিন একটি অথবা দুটি দারুচিনি মুখে নিয়ে খেতে থাকবেন মুখের স্বাদও বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার সহজ উপায়
কিডনীর রোগ হলে যে সকল খাবার পরিহার করতে হবে
আজকাল খাবারে ভেজালের পরিমাণ খুব বেড়ে গিয়েছে। তাই কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খাবার খেলে খুব সতর্কতার সাথেই খেতে হয়। কিন্তু কিছু কিছু খাবার কিডনি রোগীদের পরিহার করতে হবে। যেমনঃভোজ্য তেল জাতীয় খাবার, তাছাড়া বিচি জাতীয় খাবার। বিচি জাতীয় খাবার বলতে বুঝানো হয় যে সকল বিচি খাবার আমরা রান্না করতে পারি। যেমন সিমের বিচি, কাঠালের বিচি, মটরশুটি, ডাল ইত্যাদি।
কিডনীর রোগ হলে খাবার তালিকা - কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
সকালের খাবার: সকালের খাবারের দুইটি ডিমের সাদা অংশ রাখার চেষ্টা করুন। একটি চালের রুটি। সাথে লবণ বিহীন এক টেবিল চামচ মাখন খান।
দুপুরের খাবার: দুপুরে তিন থেকে চার কাপ ডাল ফ্রাই খান সাথে দুইটি নান রুটি। এক কাপ সবজি খান। সবজি হিসেবে ফুলকপি আলু আরও বিভিন্ন তরকারি সংযোজন করতে পারেন। সাথে তিন বা চার কাপ সালাদ রাখুন। লেটুসপাতা, ধনেপাতা, লেবু, মরিচ ইত্যাদি মিলিয়ে সালাদ তৈরি করতে পারেন।
বিকেলের খাবার: বিকেলের খাবারে ভুট্টার তৈরি ইডলি খেতে পারেন এবং এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।
রাতের খাবার: রাতের খাবারের দুই টুকরা কাটলেটের সবজি খান। সাথে একবার দুই কাপ পোলাও ও আধা কাপ সবজির তরকারি।
আরো পড়ুনঃ মায়ের রক্তের গ্রুপের সাথে সন্তানের রক্তের গ্রুপ মিলেনা কেন?
ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে সর্বশেষ
ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা খুব সতর্কতার সাথে তৈরি করতে হয়। কারণ চিকিৎসার সময় আপনি প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করছেন তা একটি কার্যকর প্রভাব ফেলে। তাই ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের খাবার তালিকা তৈরির জন্য একজন ভালো ডায়েটিশিয়ানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করলে দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন।
এছাড়াও আমরা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এটি অনুসরণ করলেও আপনি একটি কার্যকর ফলাফল পাবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।