জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিককেই একটি করে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। এর কারণ হলো বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে এই জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন হয়।
বাচ্চাদের, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানিক কাজেই জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের জন্ম নিবন্ধনে নানা রকম ভুল রয়েছে। কারো বয়সের ভুল, কারো জন্ম তারিখ ভুল, কারো বা ঠিকানা ভুল, আবার কারো ক্ষেত্রে নিজের নামটাই ভুল।
অনেকেই জানতে চান জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে ? কিভাবেই বা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হয় আর কি কি বা লাগে। আজকের আর্টিকেলে আমি বলব জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে? তাহলে চলুন শুরু করি।
(toc) #title=(সূচিপত্র)
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে প্রশ্নটির উত্তর জানার আগে আমরা আগে জেনে নিব জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে। অনেকেই আছেন যারা জন্ম নিবন্ধন করেন তারা ভুলবশত কারণে অনেক তথ্যই ভুল দিয়ে থাকেন। যা পরবর্তী সময়ে নানা রকম সমস্যার দেখা দেয়। যার ফলে জন্ম নিবন্ধনটি পুনরায় সংশোধন করার প্রয়োজন পরে।
আর অনেকেই জানতে চান এই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে। তার আগে বলে দেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজন।
একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে লাগবে NID Card বা জাতীয় পরিচয় পত্র (যদি থাকে), আরও লাগবে নিজস্ব বোর্ড পরীক্ষার সনদ ও নিজ এলাকার চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র। আর যাদের জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নি তারা NID Card এর পরিবর্তে হাসপাতালের যেকোনো সনদ ব্যবহার করতে পারবেন।
যদি জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা সংশোধন করা লাগগে তাহলে তার জন্য লাগবে জমির খাজনা অথবা বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধের একটি রসিদ এর কপি, এবং সাথে ইউটিলিটি বিলের কপিটিও লাগবে।
জন্ম নিবন্ধনের জন্ম তারিখ সংশোধন বা পরিবর্তন করার জন্য শিশু হলে টিকা কার্ডের কপি, স্কুল পড়ুয়া হলে বোর্ড পরীক্ষার সনদ অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হবে
আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে জন্ম নিবন্ধনের ভুল তথ্য সংশোধন করার জন্য যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে তার একটি তালিকা টেবিল আকারে আমি নিচে সাজিয়ে দিলাম।
যা সংশোধন করবেন বা সংশোধনের বিষয়সমূহ | যা যা ডকুমেন্টস লাগবে |
---|---|
নিজের নাম সংশোধন | ১) টিকা কার্ডের ফটোকপি (যদি বয়স কম হয়) ২) জাতীয় পরিচয় পত্র (যদি থাকে) ৩) শিক্ষাগত যোজ্ঞতা সনদ বা বোর্ড সার্টিফিকেট। |
পিতা বা মাতার নাম এর ভুল সংশোধন | ১) পিতা অথবা মাতার অনলাইন এর জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি ২) পিতা মাতার NID Card এর ফটোকপি ৩) নিজের শিক্ষা সনদ বা সার্টিফিকেট |
বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন | বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি |
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন | ১) নিজ এলাকার চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলরের একটি প্রত্যয়ন পত্র ২) স্থায়ী ঠিকানার খাজনা অর্থাৎ কর পরিশোধের যেকোনো একটি রশিদ এর ফটোকপি |
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
যারা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান তারা অনেকেই জানতে চান জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা প্রয়োজন? জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে এই প্রশ্নটির পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগবে এটাও অনেকেই জানতে চান। অবশ্য অনেকে চিন্তা করেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে মনে হয় কারি কারি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বিষয়টা কি আসলেই এরকম?
জন্ম নিবন্ধনে যদি কেউ জন্মতারিখ সংশোধন করতে চায় তাহলে তাকে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। আর কেউ জন্মতারিখ ব্যতীত অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করতে চায় যেমন নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম অথবা ঠিকানা সংশোধন করতে চায় তাহলে তার জন্য জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি লাগবে ৫০ টাকা।
যখন অনলাইনে সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয় আবেদন অনুমোদিত হয়ে গেলে নির্ধারিত সংশোধন ফি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার কাউন্সিল আফিসে এসে যোগাযোগ করতে হবে। আর সংশোধন আবেদটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে করতে হলে আবেদনের সময়ই সংশোধন ফি জমা দিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবীদের লোন
জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম
অনেকেই আছেন যারা জন্ম নিবন্ধন করার সময় শুরুতেই বয়স কম বা বেশি দিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ জন্ম তারিখ বা জন্ম সাল ভুল দিয়ে ফেলেন। যার ফলে পরবর্তী সময়ে বয়স সংশোধন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত দিন সময় লাগে এই প্রশ্নটির উত্তর জানার পাশাপাশি তাই অনেকেই জানতে চান জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম কি ঠিকই?
জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার জন্য প্রথমেই আপনার যে সঠিক বয়স তার প্রমাণের জন্য যাবতীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করবেন। তারপর অনলাইন আবেদনটি ২ কপি প্রিন্ট করে নিবেন।
এবার প্রমাণপত্র সহ আবেদনের ১টি কপি ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা,অথবা কাউন্সিলর অফিসে এসে জমা দিন এবং আরেকটি কপি উপজেলা বা উচ্চতর যেকোন কর্তৃপক্ষের অফিসে এসে জমা দিতে হবে। আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করার পরই অনুমোদন করা হলে আপনার বয়স সংশোধন হবে।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় পরিচয় পত্রের অনলাইন কপি ডাউনলোড
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে
যখনই জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের কথা আসে তখনই হাজারো মানুষের মনে প্রশ্ন থাকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে? জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে বা লাগবে তা নির্ভর করবে কেমন গতিতে আপনার সংশোধন প্রক্রিয়ার কাজটি চলছে।
বর্তমান সময়ে সব কিছুই অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। যার ফলে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হলেও প্রথমেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আর তারপর সেই আবেদন কপিটিই কিন্তু আপনার নিকটস্থ পৌরসভা উপজেলা পরিষদ কিংবা কাউন্সিলরের কাছে জমা দিতে হবে।
আপনি যে বিষয়টি সংশোধন করতে চান, সেই বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার পরই আপনার সংশোধন অনুমোদিত হবে।
তবে সাধারণত একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে গেলে প্রায় ৭ থেকে ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। তবে এই সময় আরও কম বা বেশি হতে পারে। অর্থাৎ পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা কাউন্সিলরের অফিসের উপর।
আরো পড়ুনঃ কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম
উপসংহার
জাতীয় পরিচয় পত্রের মতো জন্ম নিবন্ধনও প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। বিশেষ করে যাদের ১৮ বছর হয়নি এবং যাদের পরিচয় পত্র এখনো তৈরি হয়নি তাদের জন্য এই জন্ম নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর কারণ হলো স্কুল কলেজে ভর্তি, কিংবা যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে এই জন্ম নিবন্ধন সবার প্রথমেই প্রয়োজন। একটি জন্ম নিবন্ধনই সকল পরিচয় বহন করে।
আর সেই জন্ম নিবন্ধনটির নানান তথ্যই যদি ভুল হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী সময়ে এটা নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই যখনই জন্ম নিবন্ধন করবেন, তখনই খুব ভাবনা চিন্তা করে নির্ভুল তথ্যগুলো দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কথায় আছে না, “একটি ভুল সারা জীবনের কান্না”। জন্ম নিবন্ধনের যেকোন তথ্য ভুল হলে বিষয়টি এমনই হয়ে দাঁড়ায়। আর আশা করি এতক্ষণে জেনে গেছেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজন বা কত টাকা লাগে।
আমি আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের খুবই উপকারে আসবে। তাই যদি আপনার জন্ম নিবন্ধনে কোন প্রকার ভুল থেকে থাকে তাহলে আর দেরি না করে আজই এটি সংশোধন করে নিন।