Friday , March 14 2025

ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম | ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস কমান

ডায়াবেটিস কমানোর উপায় — বিশ্বে বর্তমানে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী মারা যাচ্ছে শুধু মাত্র তাদের ডায়বেটিস নিয়ে তাদের উদাসীনতার কারণে। ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়ামে এর মাধ্যমে এসব উদাসীনতা কাটিয়ে উঠা যায়। খাওয়া-দাওয়ায় কন্ট্রোল নিয়ে আসলে পাশাপাশি দৈনন্দিন বদঅভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলতে পারলে ডায়াবেটিস রোগ কন্ট্রোলে থাকে পাশাপাশি শরীরও ভালো ও সুস্থ্য থাকে। 

ডায়াবেটিস রোগীর অনেকগুলো ব্যায়াম রয়েছে। তবে বয়স অনুযায়ী একেক জন একেকটা ব্যায়াম করতে পারে।

বর্তমানে চলমান পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস রোগীদের আরো করুণ অবস্থা। করোনা আক্রান্ত ঝুঁকিতে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি রয়েছে। তাই এমতোবস্থায়, যেসব রোগীদের ডায়াবেটিস এর পরিমাণ বেশি বা অনিয়ন্ত্রিত, তাদের মৃত্যু ঝুঁকিও অন্যদের তুলনায় বেশি।

এই সময় খুবই সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে। ঘরের মধ্যে থেকেই সমস্ত রকম ব্যায়াম এবং খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করে চলতে হবে। যেহেতু বাহিরে যাওয়া বন্ধ তাই ব্যায়ামও প্রায় বন্ধের অবস্থার মতোই। কিন্তু সমস্ত কিছু অর্থাৎ ব্যায়াম এবং খাদ্যভ্যাস যদি নিয়ন্ত্রিত না থাকে তাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। তাই রোগীদের সুরক্ষার জন্য এমন ‍দূর্যোগপূর্ণ সময়ে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন কিছু শর্তবলি এবং নিয়ম কানুন দিয়েছেন। আজকে আমরা সেগুলোই জানবো-

ডায়াবেটিস রোগীরা কি ধরনের ব্যায়াম করবে?

স্বাভাবিক অবস্থায় একজন ডায়াবেটিস রোগী কয়েক ধরনের ব্যায়াম করতে পারে। তবে সবচেয়ে বেস্ট হচ্ছে ৪ ধরনের ব্যায়াম করা। এগুলো হলো-

  • ডায়াবেটিস রোগীর অ্যারোবিক ব্যায়াম
  • ডায়াবেটিস রোগীর স্ট্রেংথেনিং ব্যায়াম
  • ডায়াবেটিস রোগীর স্ট্রেসিং ব্যায়াম
  • ডায়াবেটিস রোগীর ব্যালেন্সিং ব্যায়াম

ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম | ডায়াবেটিস সারানোর উপায়

১। যেহেতু করোনা কালীন সময়ে আমরা সবাই বাসায় থাকি, তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট রুটিন করুন বাড়িতে ব্যায়াম করার জন্য।

২। অনেকে শহরের ভাড়া বাসা বা মালিকানাধীন বাসায় থাকে। তাদের ক্ষেত্রে, বাসার ছাদে কিংবা সিঁড়িতে হাঁটা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে সেখানেও যদি অধিক লোকসংখ্যা বা মানুষ থাকে, তাহলে সেখানে গিয়ে ব্যায়াম না করাই ভালো।

৩। এমনিতে বিশেষজ্ঞগণ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। তবে যেহেতু ঘরেই বন্ধি, তাই সকালে নাস্তা করার পর ১৫ মিনিট ব্যায়াম করা যেতে পারে অথবা হাঁটা যেতে পারে বাসার মধ্যেই। আবার দুপুরের খাবারের পর ১০-১৫ মিনিট ব্যায়াম করা বা হাঁটা যেতে পারে। ঠিক একইভাবে, রাতে খাবার পর শোয়ার ১ ঘন্টা আগে ১৫ মিনিট করে ব্যায়াম বা হাঁটা যেতে পারে।

৪। হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্মিং  আপ করলে এবং পরে কুলিং ডাউন করলে শরীর গরম থাকে।

৫। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে চলমান ট্রেডমিল মেশিন কিংবা সাইক্লিং করার প্রযুক্তি বা মেশিন থেকে থাকে, তাহলে সে বাড়িতে থেকেই নিজ বাসায় দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম সেরে ফেলতে পাড়েবে। আর সাইক্লিং যদি করে, সেক্ষেত্রে ২০ মিনিট করলেই যথেষ্ঠ।

৬। বাসার শক্ত দেয়াল কিংবা কোনো পিলারকে আপনার বিপরীত দিকে হাত ও পা দিয়ে যথেষ্ট চাপ দিয়ে রাখুন, এই ভাবে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।

৭। আর যারা কম বয়সী, তারা ইচ্ছা করলে দিনে কয়েকবার লাফ দিতে পারেন। হতে পারে তা ২০০ বা ৩০০ বার।

৮। দেহের প্রতিটি জয়েন্ট কে নাড়াচাড়া করার জন্য ব্যায়াম করতে হবে। হতে পারে সেগুলো কোমর বাঁকা করা, হাত নাড়া, দেহ সামনে ও পিছনে নেওয়া। মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বেস্ট হচ্ছে দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। যা প্রতিটি অস্থিসন্ধিকে নাড়ায় এবং এটি একমাত্র যথেষ্ট ব্যায়াম।

৯। বিশেষ করে এ সময় অবশ্য বাড়ির বাহিরে কিংবা পেছনে হাঁটা নিষেধ।

১০। অনেকে পাবলিক ব্যায়ামাগার, সুইমিং ফুল বা খেলার মাঠে গিয়ে এক্সারসাইজ করে দেহের সুস্বাস্থ্যতার জন্য। করোনা কালীন সময়ে এসব জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

১১। রোজ নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে অনেকে একটা ভুল করে যে, হঠাৎ একদিন বেশি ব্যায়াম করে কিন্তু পরের ২ দিন আর ব্যায়াম করার সামর্থ্য রাখে না। এই ভুলটা অবশ্যই করা যাবে না। দৈনিক অত্যধিক বেশি ব্যায়াম করা দরকার নেই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য। ২০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট।

১২। যদি কোনো কারণে ডায়াবেটিস রোগী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই মূহর্তে ব্যায়াম বন্ধ রাখা জরুরি। হতে পারে সেটা জ্বর, বেশি কাশ, ডায়রিয়া ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়ামের নিয়মাবলি কী কী?

সাধারণত এমনিতে ব্যায়ামের ক্ষেত্রে কোনো রকম নিয়মাবলি নেই তবে ডায়েবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কানুন মেনে সঠিক উপায়ে ব্যায়াম করতে হয়। যদি কোনো ডায়াবেটিস রোগী পূর্বে কোনো রকম ব্যায়ামের সাথে সম্পর্কিত না থাকে কিন্তু হঠাৎ থেকে ব্যায়াম করতে চায়, সেক্ষেত্রে সে যেন প্রথম অবস্থায় বেশীক্ষণ ব্যায়াম না করে। প্রথম অবস্থায় ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করে যাবে। সপ্তাহ শেষে ধীরে ধীরে এ টাইম টা বাড়বে।

যেন মাস শেষে ব্যায়ামের টাইমটা হয় ১০০ মিনিট থেকে ১২০ মিনিট। তবে এটাই যে করতে হবে তা কিন্তু নয়, সুবিধা অনুযায়ী সে তার টাইম বাড়াবে।

সপ্তাহে কয়দিন এবং কতদিন ব্যায়াম করবেন?

সপ্তাহে কত দিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম দরকার বা কতক্ষণ দরকার তার কোনো রকম ধারাবাহিকতা নেই। তবে কেউ যদি প্রথম অবস্থায় মানতে চায়, তাহলে প্রথম অবস্থায় সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করবে এবং প্রথম অবস্থায় ৩০ মিনিটের মত ব্যায়াম করবে। এবং এই টাইমিংটা ধীরে ধীরে বাড়বে।

একজন ডায়াবেটিস রোগী যখন ব্যায়াম শুরু করবে, তখন কী কী আগে থেকেই ঠিক করে নিবেন?

১। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন ডায়াবেটিস রোগী যখন ব্যায়ামের জন্য দৌড়াবে তখন অবশ্যই পারিপারশ্বিক চারপাশের দিকে খেয়াল রেখে ব্যায়াম করতে হবে।

২। হাঁটার ব্যায়ামের সময় আরমদায়ক জুতো  পরিধান করতে হবে।

৩। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে জোরে জোরে লাপানো যাবে না। এতে করে অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

দিন দিন পর্যায়ক্রমে দেশে কিডনির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো মানুষ। বিশেষ করে আমাদের শরীরে জ্বর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *