Friday , March 14 2025

সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তির উপায়

সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তির উপায় — ধূমপান আমাদের সকলের স্বাস্থের জন্য অনেক ক্ষতিকর সেটা আমরা সবাই জানি। ধূমপান করার কারণে আমাদের শারীরিক নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে ও আমরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ধূমপান কেন ক্ষতির কারণ?

ক্যান্সার: ধূমপায়ী মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য সব মানুষের থেকে অনেক গুণে বেশি। সিগারেটের মধ্যে আছে নানা ধরনের ক্ষতিকারক সকল উপাদান যা মানবদেহে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে। যার ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে আমাদের ফুসফুসের। তাছাড়াও খাদ্যনালীর ক্যান্সার, কিডনি, শ্বাসনালীর ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াস, কোলন ক্যান্সার, মূত্রথলীর ক্যান্সার সহ আরো অনন্যা রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ধূমপানের সঙ্গে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। মোট কথা ধুমপান আমাদের সম্পূর্ণ শরীরের জন্যই ক্ষতিকর।

মৃত্যু: যে সকল মানুষ ধূমপান করে থাকে তাদের মৃত্যু সম্ভাবনা সাধারণ মানুষের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। একটি গবেষণায় জানা গেছে, যারা ধূমপান করে থাকে তারা ৬০-৭০ বছরের আগেই তাদের মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবন প্রায় ৩গুণ বেশি। ধূমপান করার কারণে পুরুষের চাইতে নারীর মৃত্যু সম্ভাবনা অনেক বেশি। ধূমপান করার কারণে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর খুবই কাছাকাছি নিয়ে যায়।

হৃদরোগ: সিগারেটের মাঝে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা শরীরের রক্তের স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধূমপান করার কারণে রক্ত জমাট বাধতে পারে যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। হৃদরোগের ফলে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে।

কিডনি সমস্যা: ধূমপান করার কারণে আমাদের কিডনি ক্যান্সারসহ শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়।অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেশি থাকে।তাছাড়াও ধূমপায়ীরা খুব অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস অর্থাৎ বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। ধূমপান করার কারণে শারীরিক ক্ষতির মাঝে কিডনি রোগ অনেক বেশি জটিল।

মানসিক চাপ বৃদ্ধি: অনেক দিন ধরেই ধূমপান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। যার কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ, টনসিল এবং সাইনানাইটিস রোগের মতো নানা ধরণের রোগ শরীরে দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বর হলে অনেক দিন ধরে থাকে, যা সহজেই ঠিক হতে চায়না। শরীরের কোথাও কেটে গেলে সহজেই ঘা শুঁকাতে চায়না এছাড়াও শরীরে নানা ধরণের চর্মরোগের দেখা দেয়। মানসিক সমস্যা থেকে পরবর্তীতে হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রেইনের ক্ষতি: ধূমপান করার কারণে মানুষের মস্তিষ্কের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে বা ফেলতে পারে। ধূমপান করার ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে।

গর্ভবতি মায়ের ক্ষতি: ধূমপানের ফলে আমাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী মা হতে চলেছেন তাদের শারীরিক সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি জন্মের পরে শিশুর নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যদি বাবা সিগারেট খায় তবে সন্তানের জন্মের পরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, হার্ট ফুটা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা সহ আরো নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ত্বকের ক্ষতি, বয়সের ছাপ: সিগারেট খাওয়ার কারণে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক হ্রাস পায়। কেননা ধূমপান করার কারণে শরীরে ভিটামিন-সি এর অভাব লক্ষ্য করা যায়। ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে ভিটামিন-সি এর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকদিন ধরে ধূমপান করে থাকলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে ও এতে অল্প বয়সেই বয়স্ক দেখা যায়।

সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তির উপায়?

সিগারেটকে এখনই না করুন

আমি আর কোনোদিন ধূমপান করবো না। এই আজ কাল করে কাল আর আসেই না, তাই এখনই আমি ধূমপান বাদ দিবো সবার প্রহমে এই প্রতিজ্ঞা করে নিন তা না হলে কখনোই ধূমপান বাদ দেয়া সম্ভব না।

পরীক্ষা করুন

একদিন ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। তারপর আপনি কি ধরনের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন তা লক্ষ্য করার চেষ্টা করুন। এবং তারপর ২ দিন, ৩ দিন ধূমপান করা থেকে দূরে থাকুন। এভাবেই ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে উঠবে।

ধূমপায়ী দের এড়িয়ে চলা

আমাদের বন্ধুবান্ধব সহ আশেপাশের অনেকেই প্রতিদিন সিগারেট খায়, তাদেরকে যত সম্ভব এড়িয়ে চলা আপনার উচিত, চায়ের দোকানে অথবা আড্ডা দেওয়ার সময় অনেক সময় এক সঙ্গে ৪ থেকে ৫ টা করে সিগারেট খেয়ে থাকে তাই আমাদের যথাসম্ভব চেষ্টা করা দরকার সেই সকল মানুষদেরকে এড়িয়ে চলা।

ধূমপায়ীদের স্বাস্থগত পরিবর্তন

কয়েকদিন ধূমপান করা বন্ধ করার পরে লক্ষ্য করবেন যে আমাদের খাওয়ার রুচি বিদ্ধি হয়েছে, রাতে ভালোভাবে ঘুম হবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে সিগারেট খেয়ে থাকে দেখা যাবে তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যা নিয়ে জীবনযাপন করছে। তাই সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ধূমপান কে পরিহার করুন।

হিসাব করুন

আমরা নিয়মিত সিগারেট খাওয়ার কারণে শরীরের যেমন ক্ষতি করে থাকি ঠিক তেমনি আমাদের আর্থিকক্ষতি লসও হয়ে থাকে। হিসাবে দেখা যায় যে প্রতিমাসে আমরা সিগারেটের পিছনে এতোবেশি টাকা খরচ করি যা একত্রে করে আমরা আমাদের পছন্দমতো জিনিস ক্রয় করতে পারতাম।

মুখ ও হাত ব্যস্ত রাখা

সিগারেট ছাড়ার পরে সবার প্রথমে আমাদের কাজ হচ্ছে হাত এবং মুখ সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখা যেমন- সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে করলেই চুইংগাম খাওয়া, স্বাস্থ্যকর সকল খাবার খাওয়া। যার কারণে আমরা সিগারেট খাওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারবো আর আমাদের শরীরও সুস্থ থাকবে।

অবসর সময় ব্যস্ত রাখা

যখন আমরা অবসরে থাকি তখন দেখা যায় যে ভালো না লাগার কারণে আমরা সিগারেটকে হাতে তুলে নেই। কিন্তু এই সময়ে আমাদের সবাইকে বিভিন্ন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গান শুনা, হাঁটাহাঁটি করা কিংবা ব্যায়াম করে আমাদের অবসর সময় কাটানো উচিৎ।

ধূমপানবিরোধী সেমিনার

ধূমপানের কারণে আমাদের শরীরের কি কি ক্ষতি হয়ে থাকে এবং এখান থেকে আমরা কিভাবে পরিহার করতে পারবো সেই বিষয় নানা ধরনের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন বই বের হয়। তাই আমাদের ধূমপান ছাড়ার পরে যত পারা যায় সেই সকল বই পড়া ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করা।

ধূমপান কর্ণার থেকে দূরে থাকা

বর্তমান সময়ে একটা বিষয় খুবই দেখা যায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন রয়েছে সেখানে যারা ধূমপান করে তাদের জন্যে আলাদা সুবিধে করে দিয়েছে। তাই আপনার উচিত যতটা পারা যায় সেখান থেকে দূরে থাকা। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন গলি বা চায়ের দোকানে অনেক ধূমপায়ীদের দেখা যায় তাই আমাদের সকলের উচিত সেই সব জায়গা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা।

ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

অনেক চেষ্টা করার পরেও যদি আমরা এই ধূমপান করা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে না পারি তবে যতটা দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।

তাই আমরা বলতে পারি যে যদি সুস্থ জীবনযাপন গড়ে তুলতে চান তবে এখনি ধূমপান কে পরিহার করুন। নিজের সুস্থতার পাশাপাশি আপনার আশেপাশের সকলকে ও বন্ধুবান্ধবদের ধূমপান পরিহার করতে উৎসাহী করে তুলুন। একজন মানুষের মৃত্যু অনেক সময় পরিবারের মৃত্যু। তাই নিজের পরিবারের কথা ভেবে ধূমপানকে ত্যাগ করি, নিজে ভালো থাকি অন্যকে ভালো রাখি।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

দিন দিন পর্যায়ক্রমে দেশে কিডনির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো মানুষ। বিশেষ করে আমাদের শরীরে জ্বর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *