Friday , March 14 2025

কালোজিরার ঔষধি গুণ | কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

কালোজিরার ঔষধি গুণঃ নামে জিরা হলেও আসলে কিন্তু স্বাদে ও গন্ধে জিরার সঙ্গে কালো জিরার কোনো মিল নেই। আর ব্যবহারও কিন্ত জিরার মতো না। ইংরেজিতে কালোজিরাকে “Nijella Seed” বলা হয়। বাঙালির পাঁচফোড়ন থেকে শুরু করে সিঙ্গারা আরো নানান ধরনের ভর্তায় কালোজিরার ব্যবহার না হলে কি হয়? ইউনানি, আয়ুর্বেদিক এবং কবিজারি চিকিৎসাক্ষেত্রে কালোজিরার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। 

মসলা হিসেবেও কালো জিরার চাহিদা ব্যাপক। কালো জিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় যা মানব দেহের জন্যে খুবি উপকারি। কালো জিরাতে আছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস। এছাড়া কালো জিরাতে আছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান ও অম্ল রোগের প্রতিষেধক। কালো জিরার ব্যবহার বিধি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

বাধক দোষ

বাধক দোষ হলে মেয়েরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, আবার অনেকেই আত্মসুখে তৎপর থাকে, আবার কেউ শূচীবায়ু গ্রস্ত হয়, কারও কারও শরীর স্থূল হয়ে যায় আবার কখনো বা তা হয়না। আবার সবাই যে শুকিয়ে যাবে তেমনটি কিন্ত নয়। কিন্তু মনের উপরে রোগের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যার কারণে কেউ কেউ কামজ উন্মাদ রোগেও আক্রান্ত হয়ে যায়। আবার বাধক দোষে কোনও কোনও মহিলা জননগ্রন্থির ক্রিয়াশক্তি হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপসর্গ এসে জোটে। এক্ষেত্রে কালোজিরা সামান্য পরিমাণে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে সকালে এবং সন্ধ্যায় ৭৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় খেতে হয় এবং এটা মাসিকেও খেতে হবে। এভাবে ২ থেকে ৩ মাস খাওয়া গেলে রোগের উপশম হবে।

স্তন্যস্বল্পতা

পেটে যদি আমদোষ থাকে অথবা শরীরের রসধাতু শুকাতে থাকে স্তন্যসল্পতা দেখা যায়। এই সময়ে কালোজিরা সামান্য পরিমাণে ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭ থেকে ৮ চা চামচ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সেই পরিমাণে সকালবেলা এবং বিকাল বেলায় ৭ দিন ধরে খাওয়া গেলে উল্লেখযোগ্য আসানারুপ ফল পাওয়া সম্ভব।

মাসিক ঋতু

যেসকল মহিলা অনিয়মিত কিংবা স্বল্প অথবা অধিক স্রাবের জন্যে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাদের ঋতু হওয়ার ৫-৭ দিন পূর্বে থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম করে হাল্কা গরম এমন পানিসহ সকাল এবং বিকেলে খেতে হয়। তারপরেও অসুবিধা হয়ে থাকলে পরপর ২ থেকে ৩ মাস সেভাবে খেতে হবে।

গর্ভাশয়ের দ্বার সঙ্কোচন

প্রসবের পরে কালোজিরার ক্বাথ খাওয়া গেলে গর্ভাশয়ের দ্বার সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে স্তন্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও প্রস্রাবের বাধকতাতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পরিমাণমতো কালোজিরা খাওয়া গেলে প্রস্রাব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। সন্তান প্রসবের সময়ে কালোজিরা পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়া গেলে সন্তানের প্রসব দ্রুততার সাথে হয়।

কক্টরজ ও ঋতুরোধ

স্বল্প মাত্রায় কালোজিরা মেয়েদের ঋতুস্রাব বৃদ্ধি করে, কষ্টরজ এবং ঋতুরোধ অসুখ ভালো করে। তবে বেশি পরিমাণে কালোজিরা খেলে গর্ভস্রাব হয়।

মাথায় যন্ত্রণা

কাঁচা সর্দি হয়ে মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কালোজিরা পুঁটলিতে বেধে দিয়ে শুঁকতে হবে। তবে হা পুঁটলিতে নেয়ার পূর্বে তা রগড়ে নিতে হবে। তাতে গন্ধ বাহির হয় ও উপকার হয়। তাছাড়াও সির্কাতে ভিজিয়ে শুঁকলে মাথাব্যথা ভালো হয়। মাথায় সর্দি বসা। এই অবস্থায় কালোজিরা বেটে কপালের মাঝে প্রলেপ দিলে এবং মিহি গুঁড়োর নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়। 

নতুন সর্দি থাকা অবস্থায় কালোজিরার নস্যি নিলে উপকার হয়। গলা ফোলাতে কালোজিরা ভালো উপকারী। সর্দি-কাশির দোষে গ্লান্ড ফুলেছে সেই ক্ষেত্রে কালোজিরা, চাউল পোড়া, মুসাববর সমান পরিমানে নিয়ে বেটে প্রলেপ দিলে ১ দিনের মাঝে ফোলা এবং ব্যথা উভয়ই ভালো হবে। দাঁতের ব্যথায় গরম পানির মাঝে কালোজিরা দিয়ে তা দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যাথার উপশম হয়।

চুলকানি

কালোজিরার ভাজা তেল গায়ে মাখলে চুলকানির সমস্যা থেকে উপকার মেলে। এতে ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম করে কালোজিরা ভেজে সেই তেল ছেঁকে নিয়ে ব্যবহার করুন।

বিছের হুলের জ্বালাঃ  কালোজিরা বেটে সেটা সেখানে লাগালে অল্প সময়ের মধ্যে হুলের জ্বালা কমতে থাকে।

শোথঃ পানিতে কালোজিরাকে বেটে নিয়ে সেগুলোকে প্রলেপ দিলে হাত এবং পা ফোলাসহ সকল ধরনের শোথ ভালো হয়ে যায়।

দাদঃ কালোজিরা বেটে সেগুলো দিয়ে প্রলেপ দিলে এসকলের উপকার হয়। তাছাড়া উপরে উল্লিখিত চুলকানির নিয়মে ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো হয়।

ধবলঃ কালো জিরা বেটে প্রলেপ দিয়ে দিলে এসকলের উপকার হয়। তাছাড়া উপরে উল্লেখিত চুলকানির নিয়মে দিতে পারলে আরও ভালো হয়। 

নতুন চুল গজানোঃ কালোজিরা বেটে নিয়ে মাথায় অনেক দিন ধরে মালিশ করার ফলে নতুন চুল গজায়।

লাবণ্যঃ ঘিয়ের সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে মুখ উজ্জ্বল হয় এবং রং ফর্সা হয়।

কৃমিঃ ভিনেগারের সাথে ভিজিয়ে কালোজিরা খাওয়ার কারণে কৃমি নষ্ট হয়।

স্মৃতিভ্রংশঃ স্মৃতিভ্রংশ এবং স্মরণশক্তির দুর্বলতায় কালোজিরা খুবই কার্যকর। ৩ গ্রাম কালোজিরা ২০ মিলিলিটার বিশুদ্ধ মধুসহকারে চাটলে এই রোগ ভালো হয়।

জন্ডিস, শূল ব্যথা,  প্লীহাবৃদ্ধি, বমনেচ্ছা, বুকের ব্যথাঃ কালো জিরা বেটে খাওয়া গেলে এসকল রোগ ভালো হয়ে যায়। সেই সঙ্গে কালােজিরা বাটা গায়েতে মালিশ করতে হবে।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

দিন দিন পর্যায়ক্রমে দেশে কিডনির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো মানুষ। বিশেষ করে আমাদের শরীরে জ্বর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *